বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেট জেলা কমিটির মানববন্ধন

বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার আহ্বানে মানববন্ধন করেছে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেট জেলা কমিটি। শনিবার (৫ আগস্ট) সকাল ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমানের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার। ধারণাপত্র পাঠ করেন প্রফেসর ড. তাহমিনা ইসলাম। এডকো এর নির্বাহী পরিচালক লক্ষিকান্ত সিংহ, শাবির অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম, শাবির সহযোগী অধ্যাপক আবুল কাসেম উজ্জ্বল, সৈয়দ এডভোকেট কাওছার আহমদ, ব্যাংকার ছালেহ আহমদ চৌধুরী, আব্দুল মুঈদ, এডভোকেট মোহিত লাল ধর, শহিদ আহমদ খান সাবের, এনজিও কর্মী নংকলি প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর ২০২৩ থেকে ২৯ জানুয়ারি ২০২৪-এর মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আর কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে গেলে পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। আমরা চাই এই নির্বাচন হোক অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কিন্তু বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতা অংশগ্রহণমূলক তথা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয়। কেননা, ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গীরা চায় বর্তমান সংবিধানের আওতায় অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অপরদিকে ক্ষমতাপ্রত্যাশী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলসমূহ চায় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন। ইতোমধ্যেই এই রাজনৈতিক দলসমূহ ‘সরকারের পদত্যাগ’-এর এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, রাজপথ ততই উত্তপ্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। রাজপথে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
এমতাবস্থায় সুজন মনে করে যে, রাজনৈতিক দলসমূহ যদি অবিলম্বে তাঁদের অবস্থান পরিবর্তন না করে বা তাদের মধ্যে যদি সমঝোতা না হয়, তবে সামনের দিনগুলোতে জাতিগতভাবে আমরা চরম সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হতে পারি, দেশ চলে যেতে পারে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে – যা কারোই কাম্য নয় ।
একটি অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপ ও পারস্পরিক সমঝোতা। রাজনৈতিক দলসমূহকে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সমঝোতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ এবং সমঝোতাসূত্র নির্ধারণ করতে হবে।
মানববন্ধনে সুজনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়।
উপরোল্লিখিত প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতি সুজন-এর আহ্বান-দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জনস্বার্থে অবিলম্বে সংলাপে বসুন এবং সমঝোতায় আসুন; কী ধরনের সরকারের অধীনে (দলীয়/বহুদলীয়/নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক/জাতীয়) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারণ করুন; নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ তথা অর্থবহ করার লক্ষ্যে অংশীজনরা কে, কী ভূমিকা পালন করবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করুন; যে দল বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে, তারা কোন কাজগুলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করবে, তা নির্ধারণ করুন; যারা বিরোধী দলে থাকবে, তাঁরা কীভাবে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে; তা নির্ধারণ করুন; কোনো দল যদি এই সমঝোতা স্মারক অমান্য করে, সেক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে; তা নির্ধারণ করুন। পাশাপাশি সমঝোতা স্মারকে নিম্নবর্ণিত অঙ্গীকারসমূহ সন্নিবেশনের আহ্বান জানাচ্ছি : অঙ্গীকার করুন, আমরা যে দলই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করি না কেন- সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহসহ জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্তিশালী করবো এবং দলীয়করণের প্রভাবমুক্ত রাখবো; সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য নিয়োগ আইন প্রণয়ন ও আইনের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করবো; দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি মেনে চলবো; বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থেই একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক, কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করবো; যে কোনো রাষ্ট্রীয় সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে আলাপ-আলোচনা এবং প্রয়োজনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শের উদ্যোগ গ্রহণ করবো: সুজন-সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে, সংকট নিরসনে সংলাপের উদ্যোগ আপনারাই গ্রহণ করুন। বিজ্ঞপ্তি

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *