যেভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটে ৩ ট্রেনের সংঘর্ষ

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক: তিনটি ট্রেন—দুটি যাত্রীবাহী, একটি মালবাহী। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এই তিন ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। উড়িষ্যা ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সুধাংশু সারেঙ্গি এএফপিকে বলেছেন, এতে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে অন্তত ২৮৮ জনের, আহত ৯০০ জনের বেশি।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উড়িষ্যার বালাসোর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বালাসোরে রাতভর উদ্ধারকাজ চলেছে, এখনো চলছে। একের পর এক মরদেহ বের করে আনা হচ্ছে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বগিগুলো থেকে। কিন্তু তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষ কীভাবে হলো? এই প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।

দুর্ঘটনাস্থল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে আর উড়িষ্যার ভুবনেশ্বর থেকে ১৭০ কিলোমিটার উত্তরে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি ডাউন লাইনে ছিল। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে উডিষ্যার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এই ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মিনিট পাঁচেক পর আপলাইন দিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিল চেন্নাইগামী শালিমার–চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। হঠাৎ এই ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

এ সময় পাশের একটি লাইনে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল মালবাহী একটি ট্রেন। করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে প্রথমে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগিতে আঘাত করে। পরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকটি বগি আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী ট্রেনের ওপর গিয়ে আছড়ে পড়ে।

দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে নেমেছেন ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্সের (এনডিআরএফ) সদস্যরা। রয়েছে উডিষ্যা ডিজাস্টার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সও (ওডিআরএএফ)। উদ্ধারকাজে বিমানবাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী ছিলেন অনুভব দাস। দুর্ঘটনার বিষয়ে টুইটে অনুভব বলেন, ‘হাওড়া থেকে চেন্নাইয়ে যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেছি, এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। নিজের চোখে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে প্রাণ হারাতে দেখেছি। রেললাইনের ওপর ছোপ ছোপ রক্ত, ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। এই দৃশ্য আমি কখনই ভুলতে পারব না।’

রাজ্যে আজ শনিবার একদিনের শোক ঘোষণা করেছেন উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তিনি।

ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের প্রতি শোক জানিয়ে টুইট করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পারেন।

দুর্ঘটনাটিকে ভারতে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৩ সালে উড়িষ্যার জাজপুর জেলায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। এবারের দুর্ঘটনাস্থল থেকে সেটি ছিল মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *