তুরস্কের ক্ষমতার তৃতীয় দশকে পা রাখা এরদোগানের সামনে ২ চ্যালেঞ্জ

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক: ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত দেশ তুরস্কের নেতা হিসেবে আরও পাঁচ বছর থাকার নিশ্চয়তা পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। অর্থাৎ ২০২৮ সাল পর্যন্ত সামরিক জোট ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এ দেশটি শাসনের ম্যান্ডেট রয়েছে তার।

তবে ক্ষমতার তৃতীয় দশকে পা রাখা এরদোগানের সামনে এখন দুটি বড় চ্যালেঞ্জ। এক, তাকে এখন অবশ্যই আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা করতে হবে, যা দেশটিতে জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, গত ফেব্রুয়ারিতে আঘাত হানা বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। ওই ভূমিকম্পে দেশটির ১১টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধ লাখের বেশি মানুষ।

এরদোগান রোববার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ডে ৫২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও দুই সপ্তাহ আগে প্রথম রাউন্ডে তিনি অল্প ভোটের কারণে বিজয় অর্জন করতে ব্যর্থ হন। নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন কামাল কিলিকদারোগ্লু। যিনি এরদোগানের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে চেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক নিয়মে ফিরে আনা, প্রচলিত অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ এবং পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটাররা এরদোগানকেই বেছে নিয়েছেন, যাকে তারা একজন শক্তিশালী ও প্রমাণিত নেতা হিসেবে দেখে আসছেন।

পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর ইস্তান্বুল ও আঙ্কারায় দেওয়া দুটি বিজয়ী বক্তৃতায় এরদোগান তাকে আবারও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অর্পণ করার জন্য জাতিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

তুরস্কের দ্বিতীয় শতাব্দীর, যাকে তিনি ‘তুর্কি শতাব্দী’ বলে অভিহিত করেছেন, জন্য কঠোর পরিশ্রম করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আঙ্কারায় রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে এরদোগান বলেন, ‘আজকের একমাত্র বিজয়ী হলো তুরস্ক। দেশটি এ বছর তার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন করছে।

অবশ্য কিলিকদারোগ্লু বলেছেন, এরদোগানের জন্য সমস্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদ একত্রিত করে নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে, যা ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অন্যায়’ ছিল।

আঙ্কারায় তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র না আসা পর্যন্ত আমরা এই সংগ্রামের অগ্রভাগে থাকব।’

এরদোগানের সমর্থকরা বিজয় উদযাপনের জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন, তাদের হাতে ছিল তুরস্ক বা ক্ষমতাসীন দলের পতাকা, গাড়ির হর্ন বাজানোর পাশাপাশি তার (এরদোগান) নাম উচ্চারণ করেছিলেন তারা। ইস্তান্বুলের বেশ কয়েকটি পাড়ায় সেলিব্রেটি গুলির শব্দও শোনা গেছে।

বিশ্বব্যাপী নেতারা তুরস্ক এবং এরদোগানের বৈশ্বিক রাজনীতিতে বর্ধিত ভূমিকার কথা তুলে ধরে অভিনন্দন পাঠিয়েছেন। তার পরবর্তী মেয়াদে জোটের ভবিষ্যত এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে ন্যাটোর সহকর্মীদের সাথে আরও সূক্ষ্ম কৌশল অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন এরদোগান।

বিগত কয়েক বছর মাঝে মাঝে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা বলেছেন, তারা এরদোগানের সাথে কাজ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। তুরস্কের বাধার কারণে আটকে আছে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদান। সেটারও একটা সমাধান হতে পারে। ইউক্রেনীয় শস্য চালানের অনুমতি দিতে এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট এড়াতে একটি চুক্তির ধারাবাহিকতারও কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তুরস্ক।

বিজয়ী বক্তব্যে এরদোগান বলেছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর পুনর্গঠনই হবে তার প্রথম অগ্রাধিকার। তিনি আরও বলেন, কাতারের সাথে পরিচালিত একটি পুনর্বাসন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১০ লাখ সিরীয় শরণার্থী সিরিয়ার তুর্কি নিয়ন্ত্রিত ‘নিরাপদ অঞ্চলে’ ফিরে যাবে। এ নিয়ে কাজ চলছে।

এই নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে যে, এরদোগান রক্ষণশীল ভোটারদের সমর্থন ধরে রেখেছেন, যারা তুরস্কে ইসলামের উত্থাপনের জন্য তার প্রতি নিবেদিত রয়েছেন। যা ধর্মনিরপেক্ষ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দেশটির প্রভাব বৃদ্ধি করে চলেছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *