বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের,সিলেট জেলার “মুল্লুক চল” আন্দোলনের ১০২ তম বার্ষিকী পালন

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন, সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে  রক্তস্নাত ২০মে’ কে “চা শ্রমিক দিবস” হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা ও মজুরিসহ ছুটি, পুর্নাঙ্গ এরিয়া প্রদান, ৫০০ টাকা  মজুরি,ভূমি অধিকার নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবিকে সামনে রেখে মুল্লুক চল আন্দোলনের ১০২ তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে।২০ মে, শনিবার সকাল ৮ টায় লাক্কাতুরা, মালনিছড়া, খান,কেওয়াছড়া, হিলুয়াছড়া, ও লালাখাল বাগানে সংগঠন এর পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরবর্তীতে ২১ মে, রবিবার বিকাল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে র‍্যালী অনুষ্ঠিত হয় এবং  জিন্দাবাজার নজরুল একাডেমিতে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।সভায় বিরেন সিং এর সভাপতিত্বে ও অজিত রায় পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম এডভোকেট।, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সভাপতি মোখলেছুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক  প্রসেনজিৎ রুদ্র।আরো বক্তব্য রাখেন মালনিছড়া চা বাগান এর নমিতা রায়,লাক্কাতুরা চা বাগান এর হৃদয় লোহার,খান চা বাগানের রতন বাউরি,হিলুয়াছড়া চা বাগানের রবি মাল প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, এই ২০মে’র ইতিহাসকে স্মরণ করে চা শ্রমিক ফেডারেশন  প্রথম ২০০৮ সাল থেকে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে চা শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ঐ দিনটি সবেতন ছুটির দাবি জানিয়ে আসছে।
গত ২০২১-২০২২ সালের চুক্তির মেয়াদ  শেষ  হয়েছে  প্রায়  ৫ মাস।এখনো ২০২৩-২০২৪ সালের নতুন চুক্তি সম্পাদন করা হয় নি।এমন কি, গত মেয়াদের এরিয়ার বিল (বকেয়া পাওনা)প্রায় ৩০ হাজার টাকা এখনও পূর্ণাঙ্গ প্রদান করা হয় নি।৩০ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ১১ হাজার টাকা নিতে শ্রমিকদেরকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। বাকী ১৯ হাজার টাকার দাবিতে  শ্রমিকরা যাতে আন্দোলনে নামতে না পারে , তার জন্য প্রশাসনিক  তৎপরতা চলছে।আমরা চা বাগানের সকল শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে প্রশাসন, মালিক পক্ষ, দালাল শ্রমিক নেতাদের টালবাহানা মোকাবেলা করে  দীর্ঘ ১৯ দিন অনাহারে অর্ধাহারে রাজপথে আন্দোলন করেছি।আন্দোলনের চাপে সরকার শ্রমিক পক্ষ ছাড়াই শুধু মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা করে  দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেন।পরবর্তীতে  প্রধানমন্ত্রীর  প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শ্রমিকদের এরিয়ার বিল,ভূমি অধিকার, শিক্ষা,চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। চুক্তি দেরিতে হওয়ার কারণে স্থায়ী শ্রমিকরা এরিয়ার বিল পেলেও অস্থায়ী শ্রমিকরা এরিয়ার বিল পায় না।
বক্তারা আরো বলেন,  মুল্লুক  চল আন্দোলনের ১০২-তম বর্ষে এসেও চা শ্রমিকদের সুখের  স্বপ্ন পূরণ হয়নি। চা শ্রমিকরা আজীবন পুঁজিবাদী দলের ভোট ব্যাংক এবং মালিকদের মুনাফা লুটার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এখনও আমাদের রেশন সপ্তাহে আড়াই কেজি খাবার অযোগ্য পঁচা চাল বা আটা। একটা কুঁড়ে ঘরে পরিবার-পরিজন, গরু-ছাগল নিয়ে গাদগাদি করে থাকতে হয়। তাও আবার সময়মতো মেরামতের অভাবে বৃষ্টির জলে ভিজতে হয়।
 প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ১০ কোটি চা পান করে দেশের মানুষ।  চাহিদা বাড়ছে, দাম বাড়ছে এবং মালিকদের মুনাফাও বাড়ছে। অথচ চা তৈরির মূল উৎপাদনকারী যারা, সেই উৎপাদনকারী  শ্রমিকদের জীবন কাটছে অবহেলায়। ১৬৯ বছর ধরে বসবাস করা সত্ত্বেও  বসতভিটার মালিকানা নেই। প্রত্যেক বাগানে এমবিবিএস ডাক্তার বা উপযুক্ত নার্স না থাকায় অনেককেই অকালে জীবন হারাতে হয়। মালিকদের অবহেলা ও দুরভীসন্ধির কৌশলে ইমাম,বৈকুন্ঠপুর,ধলাই,রেমা ও কালিটির মতো অনেক চা বাগানে শ্রমিকদের মজুরি রেশন ছাড়া মাসের পর মাস বন্ধ রাখা হয়।শ্রমিকরা শিক্ষিত হলে সচেতন হবে, তখন আর ন্যায্য মজুরি থেকে ঠকানো যাবে না। তাই একেকটি বাগানে হাজার হাজার মানুষ থাকলেও প্রত্যেকটি বাগানে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই।তাই চা শ্রমিকদের উপরিউক্ত সমস্যা সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ২০ মে এর সংগ্রামী চেতনায় শানিত হয়ে আপোষহীন ধারায় ১০ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য চা শ্রমিকদের প্রতি আহবান জানান হয়।
কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *