বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে প্রাণবন্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা

বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সোমবার স্নিগ্ধ সকালে আখালিয়ার ক্যাম্পাসজুড়ে দেখা গেল সোনামনিদের কলকাকলি। পুরো ক্যাম্পাস সেজেছে অপরূপ সাঁজে। সাজানো হয়েছে স্টল। বীরশ্রেষ্ঠদের নামে চারটি হাউজ করে সাজানো স্টলে স্টলে ছিল শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানান কর্মতৎপরতা। জীবনকে কিভাবে সহজ করা যায় কী কী প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে আরও সুফল এনে দিতে পারে এমনি বেশ চমকপ্রদ দক্ষতা প্রদর্শন করেছে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের মেধাবীরা। 

আন্ত হাউস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা-২০২৩ এর সফল এই মেলায় শিক্ষক শিক্ষার্থী সবাই ছিলেন প্রাণবন্ত। শিক্ষণের পাশাপাশি বাস্তব জীবনে কিভাবে প্রকাশ ঘটানো যায় তার বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরেছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

সকাল ৯টার দিকে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান , বিজিবি সিলেট এর উপমহাপরিচালক ও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জিএইচ এম সেলিম হাসান বিজিবিএম, পিএসসি জি+ বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন।

পরে বিজ্ঞান মেলায় স্টল ঘুরে দেখেন এবং শিক্ষার্থীদের তৈরি করা বিজ্ঞানের নানান কলাকৌশল ও প্রদর্শিত যন্ত্র কিভাবে কাজ করবে তাদের কাছ থেকে শুনেন।

এসব অতিথি হিসেবে ছিলেন, জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন, ১৯ বিজিবি সিলেট এর অধিনায়ক ও প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির কো চেয়ারম্যান লে. কর্নেল খোন্দকার মো. আসাদুন্নবী (পিএসসি), ৪৮ বিজিবি সিলেট এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মুনতাসির মামুন পিএসসি, বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মেজর মো. আইয়ুব খান, উপাধ্যক্ষ মো. এনায়েতুর রহমান সহ কলেজের উপদেষ্ঠামন্ডলি, শিক্ষকবৃন্দ ও অভিভাবকবৃন্দ।

মেলা ঘুরে দেখা যায় আগামী বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা তাদের মেধার স্ফুরণ ঘটিয়েছে নানান যন্ত্র তৈরি করার মধ্য দিয়ে।

চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী সাগ্নিক রায় সোহম এর উপস্থাপনা দেখে অনেকেই বাহবা দিয়েছেন। সোহম জাংক ফুড বিষয়ে সচেতনতামুলক তথ্য তুলে ধরেছে। তার উপস্থাপনায় ছিল আইসক্রীম, সাদা চিনি নামক বিষ, সফট/ এনার্জি ড্রিংক, বার্গার, চকলেট, চিপস কিভাবে আমাদের জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

ষষ্ট শ্রেনীর শিক্ষার্থী শাফিন আহমেদ ও নাদিল নুর উইন্ড মিল দিয়ে কিভাবে বাতাসের সাহায্যে জেনারেটর চালিয়ে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। বিদ্যুৎ সংকটে কম মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল দেখিয়েছে তারা।

১ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তানভীর রহমান মাহিন ইনফো ব্রাউজার তৈরি করেছে। তার এই ব্রাউজারে একইসাথে গুগল, ইউটিউব থেকে নিয়ে দেশের মানুষজন যতগুলো অ্যাপস বেশি ব্যবহার করে তা একসাথে ব্যবহারের প্রযুক্তি যোগ করেছে একই ব্রাউজারে।

সাবমেরিন নাবিকেরা পথ চলাচল সহজীকরণে পেরিস্কোপের ব্যবহার দেখিয়েছে ৭ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মাহফুজুল আলম।

অর্পিতা বর্মন স্মার্ট সিটির ধারনা তুলে ধরেছে তার উপস্থাপনায়। সে দেখিয়েছে কিভাবে হাউড্রোলিক ব্রীজ নির্মান করে শহরের মাঝ দিয়ে বহমান নদীর ব্রীজের নিচ দিয়ে জাহাজ চলাচল করানো যায়। শহরের ছোট রাস্তায় কিভাবে যান চলাচল সহজ করা যায়।

বাসায় সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কিভাবে কৃত্রিম ঝর্ণা তৈরি করে সেখানে পাম্পিং মেশিনের মাধ্যমে কিভাবে কম মূল্যের মধ্যে ফুল ও ঝর্ণা প্রবাহমান রাখা যায় সেটি উপস্থাপন করেছে সুদিপ্তা দাস।

ডলফিন ফ্লাওয়ার ডিএনএ এক্সট্রাক্ট করে কিভাবে গোল্ডেন রাইস উৎপাদন করা যায়। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। তার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে আফরা নিনান নুর ও রাইদা আবিদ সুহা।

এমন আরও বেশ কতগুলো স্টল ছিল যা বিজ্ঞানের নতুন নতুন তথ্য ও আবিষ্কারের নমুনা হিসেবে তারা উপস্থাপন করেছে। শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটাতে আগামীতে আরও সুন্দরভাবে মেলার আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে শিক্ষার্থীদের এমন উপস্থাপনার প্রশংসা করেন।

মেলায় দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য একক ও দলীয় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা বাছাই করে পুরস্কার প্রদান করা হয়। চ্যাম্পিয়ন, রানার আপসহ কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি ও অতিথিবৃন্দ।

দলীয় ‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে সাফিন আহমেদ ও নাদেল নুর, দ্বিতীয় হয়েছে মৌমিতা চৌধুরী ও অনিরূদ্ধ তালুকদার। তৃতীয় হয়েছে রাখি পাল, ইসরাত জাহান ও মুনতাহা আহমেদ।

দলীয় ‘খ’ গ্রুপে পথম হয়েছে সুদিপ্তা দাস শ্রুতি। দ্বিতীয় হয়েছে প্রমা তালুকদার, তিথি দে তৃষা ও মৌমিতা দাস।

তৃতীয় হয়েছে শৈলী তালুকদার ও আয়েশা চৌধুরী।

একক প্রদর্শনীর ‘ক’ গ্রুপে ১ম হয়েছে সাগ্নিক রায় সোহম। দ্বিতীয় হয়েছে ফাতেহা বিনতে আহসান এবং তৃতীয় হয়েছে অনিরূদ্ধ সরকার।

একক প্রদর্শনীর ‘খ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে রুদ্র কুমার বালা। দ্বিতীয় সুদিপ্তা দাশ প্রমি এবং তৃতীয় হয়েছে  অর্পিতা বর্মন।

কৃইজ প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে ফিওনা সরকার, দ্বিতীয় রাহনুমা তাবাস্সুম মাঈশা ও তৃতীয় তাসনিয়া তাহিয়া।

‘খ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে আদিব হাসান, দ্বিতীয় পুজা সরকার এবং তৃতীয় অনুরুপ কান্তি দাস।

মেলায় হাউস ভিত্তিক দক্ষতা বিচারে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান হাউস। রানার আপ হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ শেখ হাউস।বিজ্ঞপ্তি

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *