২৫৭ কোটির শুল্কমুক্ত সরঞ্জাম পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নাগরিকের পার্কে, তথ্য নিচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা

নিউজ ডেস্ক::

শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় (বন্ড) সিঙ্গাপুর থেকে সরঞ্জাম আমদানিতে নারায়ণগঞ্জের এসিএস টেক্সটাইলস নামক একটি প্রতিষ্ঠান চরম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সিঙ্গাপুর থেকে ২.৩ কোটি মার্কিন ডলারের সরঞ্জাম আমদানিতে জালিয়াতির এই অভিযোগ। ডলারের রেট ১১২ টাকা হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৫৭ কোটি টাকা।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, টেক্সটাইল কোটায় শুল্কমুক্তভাবে সরঞ্জাম এনে তা নিয়ম বহির্ভূতভাবে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় স্প্ল্যাশ ওয়ার্কস ওয়াটার পার্কের কাজে লাগানো হয়। এটি এসিএস টেক্সটাইলসের একটি সহযোগি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে এই কারসাজির মাধ্যমে এসিএস টেক্সটাইলের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগটি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের নজরে এসেছে বলে জানা গেছে।

এর অংশ হিসেবে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করছে একটি টিম। এ ছাড়া বন্ড কমিশনারেট কার্যালয় থেকেও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন ।

বন্ড কমিশনারেট সূত্র বলছে, বন্ড সুবিধা গ্রহণের শর্ত অনুযায়ী যে প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদেশ থেকে সরঞ্জাম আমদানি করা হবে, তা শতভাগ রপ্তানিমুখী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাজেই লাগাতে হবে। যদি শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাপড় আনা হয়, সে ক্ষেত্রে ওই কাপড় দিয়ে তৈরি সব পোশাক রপ্তানি করতে হবে। এমনকি যদি তৈরির সময় কোনো পোশাক নষ্ট হয় (ওয়েস্টেজ), তাও সরকারকে হিসাব দিতে হবে।

তবে এসব নিয়মের কোনো তোয়াক্কাই করছে না এ প্রতিষ্ঠানটি। তারা শুল্ক সুবিধার আওতায় এসব সরঞ্জাম এনে ওয়াটার পার্ক নির্মাণ করছে।

জানা গেছে, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মাসুদ দাউদ আকবানীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসিএস টেক্সটাইলস (বাংলাদেশ) লিমিটেড বন্ড সুবিধার আওতাভুক্ত হওয়ায় সম্প্রতি সোহেল অ্যান্ড ব্রাদার্স (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান থেকে এলসির মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ২.৩ কোটি মার্কিন ডলারের সরঞ্জাম আমদানি করে। সেই সরঞ্জামই স্প্ল্যাশ ওয়ার্কস ওয়াটার পার্কে আই পাম্প (ভাল্ব) স্থাপনের কাজে লাগানো হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র আরও বলছে, বন্ডের শর্ত অনুযায়ী ওই সরঞ্জাম শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান এসিএস টেক্সটাইলসের কাজে লাগানো হবে বলে ঘোষণা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণাপত্রের সঙ্গেই প্রতারণা করেছে।

শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব সরঞ্জাম আমদানির কাগজপত্র বলছে, সোহেল অ্যান্ড ব্রাদার্স (সিঙ্গাপুর) নামক প্রতিষ্ঠান থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় হ্যান্ড পাম্প, ইনজেকশন ইউনিট, ডিপোলক্স পুল কমপ্যাক্ট, ওয়াটার স্টাইল চেক ভাল্ব, কয়েক ধরনের ভাল্ব কিট ডিফেনডার, মিডিয়া একুপারল, ডিফেনডার কেমিক্যাল, লিভির ওপারেটেড ওয়াটার স্টাইল, ফ্লো রেট রেইঞ্জ, টেকনিক্যাল ডেটা ফ্লো রেট রেইঞ্জ, এক্সটারনাল এয়ার সাপ্লাই, পারলিট, অটোমেটিক বাম্প সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম আমদানি করা হয় এসিএস টেক্সটাইলসের অনুকুলে।

ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, এসব সরঞ্জাম চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে খালাস করা হবে। কিন্তু খালাসের সময় প্রতিষ্ঠানের নামের স্থলে এসিএস টেক্সটাইলসের বদলে নাম লেখা হয় মুন্সীগঞ্জের নির্মাণাধীন সহযোগি প্রতিষ্ঠান স্প্ল্যাশ ওয়ার্কস ওয়াটার পার্ক লিমিটেডের নাম। সে অনুযায়ী এসিএস টেক্সটাইলসের নামে এলসি করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ওই ২৫৭ কোটি টাকার সরঞ্জাম চলে যায় স্প্ল্যাশ ওয়ার্কস ওয়াটার পার্কে। এলসির লেনদেনও করা হয় এসিএস টেক্সটাইলসের বাংলাদেশের লিয়াজোঁ ব্যাংক হিসাব থেকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (সিঙ্গাপুর) লিমিটেডে। এ ছাড়া আমদানিকারকের কাস্টমার আইডিতেও স্প্ল্যাশ ওয়ার্কস ওয়াটার পার্কের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে স্প্ল্যাশ ওয়ার্কস ওয়াটার পার্কের পরিচালক ওভায়েস মাসুদ আকবানীর বক্তব্য নিতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তাকে খুদে বার্তা পাঠালেও উত্তর মেলেনি।

কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিস সূত্র জানিয়েছে, শতভাগ রপ্তানিকারকদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। বন্ডেড সুবিধার কোনো পণ্য বাইরে বিক্রি করতে হলে সরকারের প্রযোজ্য শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু সরকারের দেওয়া এ সুবিধার অপব্যবহার করছে এসব প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে এসিএস টেক্সটাইল (বাংলাদেশ) লি. এবং এসিএস টাওয়েলের কর্নধার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ নাগরিক মাসুদ দাউদ আকবানীর বিরুদ্ধে হুন্ডির মাধ্যমে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করার তথ্য উঠে আসে এক গেয়েন্দা প্রতিবেদনে।

ওই প্রতিবেদনে অর্থ পাচার ছাড়াও বলা হয়, মাসুদ আকবানীর প্রতিষ্ঠান শতভাগ রপ্তানীমুখী এবং বন্ড প্রতিষ্ঠান হলেও বন্ডের ডিউটি ফ্রি ভাইস-কেমিক্যাল আমদানি করে লোকাল মার্কেটে বিক্রি করে থাকে। কয়েকটি লোকাল টেক্সটাইল মিলের পণ্য (ক্লাসিক্যাল হোমস) এই কারখানায় ডাইং ও প্রিন্টিং করা হয়, যা অবৈধ। এই অভিযোগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *