সালাহউদ্দিনের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে যে দাবি জানাল বিএনপি

নিউজ ডেস্ক:: ভারতের আদালতে সদ্য বেকসুর খালাস পাওয়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে মুক্ত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফখরুল বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তাকে বিনা কারণে অন্যায়ভাবে দীর্ঘ ৮ বছর ভারতে কারাগারে এবং নজরবন্দি অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বেকসুর খালাস দেওয়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের।’

ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেতা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অন্যতম ভ্যানগার্ড বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে অবিলম্বে আমাদের মাঝে ফেরত চাই। সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশের প্রেক্ষিতে অবিলম্বে তাকে সসম্মানে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। তার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য ও সম্মানিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতের আদালতে বিচারকালীন সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ মোকাবিলা ও খণ্ডন করে এবং নিজের পক্ষে ৭০টি দালিলিক প্রমাণ ও সাফাই স্বাক্ষী উপস্থাপন করে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কিছু স্বশস্ত্র ব্যক্তিদের দ্বারা অপহরণ ও গুম হয়েছিলেন এবং ওই অপহরণকারীরা তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় সেখানে ফেলে রেখে আসে। ভারতীয় আদালত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সব সাক্ষ্য ও দলিলগুলো পর্যালোচনা করে তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। তাকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করানোর জন্য ভারত সরকারকে নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ভারত সরকার আপিল করলে আপিল আদালতও বিচারিক আদালতের বেকসুর খালাসের রায় ও প্রত্যাবর্তন করানোর নির্দেশনার আদেশ বহাল রাখেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন, নিপীড়ন, হামলা-মামলার অন্যতম শিকার সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও কেন্দ্রীয় সংসদের এককালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আইনজীবী ছিলেন, এক সময়ের বিচারক ছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন, এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। তার বর্ণাঢ্য জীবনে কোনো কালিমা লাগেনি। তিনি বর্তমানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সালাহউদ্দিন ৮ বছর যাবত ভারতে মিথ্যা মামলা মোকাবিলা করে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। ভারতের আদালতে তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযুক্ত করে বিচারের সম্মুখিন করা হয়। তিনি বিচারিক আদালত ও আপিল আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, সালাহউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশের এই অবৈধ সরকার চক্রান্ত করে সীমাহীন নির্যাতন ও হয়রানি করেছে। তাকে এখন নিঃশর্তভাবে মুক্ত অবস্থায় ফেরত চাই।’

এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ ‘গুম’ হওয়া নেতাকর্মীদের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বহু সংবাদ সম্মেলন, রাজনৈতিক কর্মসূচি, মাঠের কর্মসূচি, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। এখনো যখনই সময় পাই, সুযোগ আসে এম ইলিয়াস আলীসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতাকর্মী গুম হয়েছে তাদের জন্য সবসময় উদ্যোগ নিচ্ছি, বিশ্বজনমত তৈরি করেছি। তাদেরকে ফিরে পাওয়ার জন্য এটা আমাদের বহাল আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *