মিজোরামে যেভাবে ব্যাম্বু সম্মেলনে রূপ নিল জি২০ সম্মেলন

প্রসঙ্গত, বিজনেস ২০ বা বি-২০ হলো একটি এনগেজমেন্ট গ্রুপ, যা জি-২০ ফোরামের মধ্যে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব করে। এই সংস্থাটি ব্যবসায়িক সম্প্রদায়কে জি-২০ এর সঙ্গে জড়িত হওয়ার ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে। মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং সিকিম নিয়ে গঠিত বি-২০ এর বৈঠককালে গৃহীত সুপারিশগুলো পাঠানো হয় জি-২০ এর সভাপতিত্ব করা দেশের কাছে।

অনুষ্ঠানের মূল পর্বটি মিজোরাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সিআইআই নর্থ ইস্ট কাউন্সিলের কো-চেয়ারম্যান প্রদীপ বাগলার সূচনা বক্তব্য দিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হয়। এর পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা, রাজ্য সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী সোম প্রকাশ এবং অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও শীর্ষ কর্মকতারা এতে বক্তৃতা করেন।

প্রোগ্রামের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে নগর পরিকল্পনা, অবকাঠামো, বাঁশ, স্টার্টআপ, দক্ষতা উন্নয়ন, তাঁত ও হস্তশিল্প, নার্সিং এবং প্যারামেডিকসে বহুপাক্ষিক ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের সুযোগের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ইস্টমোজো ডটকম জানিয়েছে, মিজোরামে জি২০ বি২০ বৈঠকের থিম ছিল- বাঁশ। বিমানবন্দরে নামার মুহূর্ত থেকেই শুরু করে বাঁশের থিমযুক্ত মিউজিক। এমনকি লেংপুই বিমানবন্দরে অতিথিদের স্বাগত জানানো হয় বাঁশ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমেই।

এছাড়া সম্মেলনের দিন প্রবেশের পথগুলোতে বাঁশের পাত্র এবং অন্যান্য উপকরণ প্রদর্শনীর মাধ্যমে সাজানো হয়েছিল। এমনকি বক্তৃতাগুলোও ছিল কমবেশি রাজ্যে বাঁশের প্রাচুর্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। উদ্দেশ্য ছিল সফরকারী বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। সব কিছু মিলিয়ে জি২০ বি২০ সম্মেলন যেন ব্যাম্বু তথা বাঁশ সম্মেলনে পরিণত হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা অনেক বছর আগে থেকেই তার টপ এজেন্ডায় ‘বাঁশ’ রেখেছেন। মিজোরামের জমকালো অনুষ্ঠানেও তার বক্তৃতার প্রায় ৯০ শতাংশ বাঁশ সম্পর্কিত ছিল। তাই এ কথা শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, রাজ্যটি যখন তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জি২০ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল, তখন বাঁশের উপর ফোকাস করা হয়েছিল।

মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তৃতায় রাজ্যে বাঁশের প্রাচুর্যের বিষয়ে বলেন, আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন যে, এখানে ৫০ শতাংশেরও বেশি ভূমি বাঁশ দ্বারা আবৃত। প্রাকৃতিক বাঁশ, যা ঈশ্বর আমাদেরকে পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে দিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে জানিয়েছেন, রাজ্যে উৎপাদিত প্রায় ২৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন বাঁশের বেশিরভাগই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। তাহলে আমরা এটা দিয়ে কী করব?

এগুলো দিয়ে সিলিং, মেঝে এবং কাপড় তৈরির কাগজসহ সব আসবাব তৈরির জন্য কাঠের সম্পূর্ণ বিকল্প হতে পারে। এটি প্রায় একটি জাদুর কাঠির মতো, যা দিয়ে আপনি অনেক কিছু তৈরি করতে পারেন, জোরামথাঙ্গা।

মুখ্যমন্ত্রী বায়ুমণ্ডলকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাঁশকে একটি যাদুর কাঠি উল্লেখ করে বলেন, ‘ঈশ্বর আমাদের একটি খুব ভাল মেশিন (বাঁশ) দিয়েছেন, যা এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে বিশুদ্ধ করবে। অর্থনৈতিকভাবেও এটি একটি জাদুর কাঠি। পরিবেশবিদরা কার্বনের সমস্যা নিয়ে কথা বলছেন, এক্ষেত্রে আমরা বাঁশ উৎপাদন করতে পারি, কারণ গাছের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি কার্বন গ্রহণ করতে পারে বাঁশ।

বিজেপি দলীয় এই মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সত্যিই ঈশ্বর যদি উচ্চস্বরে কথা বলেন, তাহলে তিনি বলবেন, তোমরা ভারতীয় জনগণ, তোমরা মিজোরামের লোক, তোমরা বোকা মানুষ, আমি তোমাদের বায়ুমণ্ডলকে শুদ্ধ করার জন্য বাঁশ দিয়েছি এবং আমি তোমাদেরকে জাদুর কাঠি দিয়েছি, অথচ তোমরা জান না এটি কীভাবে কাজে লাগাতে হয়। অতএব আপনারা সচেতন হোন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং অতিথিদের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা ফিরে গিয়ে জনগণকে বলুন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি ছোট রাজ্য রয়েছে, যা মিজোরাম নামে পরিচিত। ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এই রাজ্যের জমি সবুজ জিনিসে (বাঁশ) ভরা, সেখানে বিনিয়োগ করা খুব লাভজনক।

তবে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীর এমন বাঁশ নীতির সমালোচনা করে আসছে বিরোধী দলগুলো। তারা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর দাবির কোনো সত্যতা নেই। গত বছর এক প্রেস কনফারেন্সে রাজ্যের জেডপিএম নেতা লালদুহোমা মন্তব্য করেছিলেন, রাজ্যের বাঁশ নীতির কোনো সম্মিলিত সমর্থন নেই। তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৬ সালে প্রবর্তিত বাঁশ নীতি ব্যক্তিগত লাভের জন্য অপব্যবহার করছেন মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা। এটি একটি বড় ব্যর্থতা।

এ ছাড়া ২০২১ সালে কংগ্রেসের  যুব কমিটি যুব কংগ্রেস এক বিবৃতিতে বলে, মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা ব্যাম্বু সিনড্রোম ভাইরাসে আক্রান্ত।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *