রাশিয়া জিতলে কি হবে পশ্চিমের?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: ইউক্রেনের কাঁধে বন্দুক রেখে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে পশ্চিমারা। চোখের পলকে বছর পার হয়ে গেছে তবুও অস্ত্রশস্ত্র ঢেলে যুদ্ধ এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে ইউক্রেন মিত্ররা। সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন-এর শেষ কোথায়? এবার কি যুদ্ধে পশ্চিমারাও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে পড়বে? নাকি ইউক্রেনকে একাই চলতে হবে? ন্যাটো কি বাল্টিক দেশের মরণ লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়বে? এমন প্রশ্নের কিছু বিশ্লেষণ উঠে এসেছে স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে।

ইউক্রেনের মিত্র পশ্চিমারা হলেও পুতিনের শক্তিশালী মিত্র হলো ‘সময়’। ন্যাটো জোট-পশ্চিমা বিশ্ব এক হয়েও নড়াতে পারছে না তার অবস্থান। বিশ্লেষকদের ধারণা, বিজয় এখনও মস্কোর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এত সহায়তা সত্ত্বেও রাশিয়া পুরোদমে রণাঙ্গণ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের মাঠে সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল তার মিত্রদের ওপর। তবে দেশটিতে অস্ত্রের সরবরাহ সীমাবদ্ধ। কেননা, রাশিয়ার বিপক্ষে দাঁড়াতে হলে প্রয়োজন ভারী অস্ত্রের। ইউক্রেনে তার প্রতিস্থাপন সহজ নয়। সেই পশ্চিমা সংহতির ভঙ্গুর দশা। তারপর ন্যাটোর কোনো আদেশ নেই, এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কোনো আগ্রহ নেই সংঘাতে যোদ্ধাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার জন্য। রুশ সাফল্য কি তবে পশ্চিমে প্রভাব ফেলবে? হ্যাঁ। যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, পশ্চিমারা ক্লান্ত হয়ে পড়বে।

বিশ্বের বুকে রাশিয়া পুনরুত্থিত হবে। বেলারুশের চারপাশে রাশিয়ার দখল শক্তিশালী হবে। পশ্চিমাদের মতে এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়ার মতো বাল্টিক রাজ্যগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়বে। এদিকে পশ্চিমাদের অস্তিত্বের সংকটে নতুন ঝুঁকি হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া আর ইরান। প্রতিবেদনটিতে উল্লিখিত দেশগুলোকে ‘অশুভ অক্ষ’ বলেও সম্বোধন করা হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে পশ্চিমা প্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে শক্তিশালী প্রমাণিত হয়েছে। রুশ সেনারা প্রযুক্তির আশীর্বাদ পায়নি। সম্পূর্ণ সুবিধা ভোগ করেছে ইউক্রেনীয় সেনারা। তবে নির্ভুল অস্ত্র তৈরি, ব্যয়বহুল সংগ্রহ এবং প্রতিস্থাপন দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ পশ্চিমাদের জন্য। তাই হতেও পারে যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমারা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বাধ্য হবে। আর রাশিয়া রাজত্ব করবে বাল্টিক রাজ্যে।

পুতিন এখনও ক্ষমতায় থাকবে, আর পশ্চিম ইউক্রেনে আরও শক্তিশালী অস্ত্র পাঠাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। পরিস্থিতির পূর্বাভাস পেতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছে স্কাই নিউজ। সাংবাদিক এবং লেখক অলিভার বুলো জানান, তিনি বিশ্বাস করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও রাজত্বে থাকবেন। তবে রাশিয়ার ক্ষয়প্রাপ্ত অর্থনীতি অভিজাতদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করতে পারে। যদিও পুতিন আপাতত কোনো অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন না। তবে তিনি নিজেকে কখনো দুর্বল প্রদর্শনও করেননি। এটা নিশ্চিত যে, তার অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে বলেও হয়তো তিনি আশা করছেন না। এই বিশেষজ্ঞ জানান, ‘আমি মনে করি রাশিয়ান আক্রমণ ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে যাবে। গ্রীষ্ম আসতে আসতে ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন জায়গা করে নেবে।’ এর কারণ হিসাবে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন-কিয়েভের অনুপ্রাণিত সেনাদের অবস্থান আর অত্যাধুনিক পশ্চিমা অস্ত্রের আগমনকে।

এদিকে বিশেষ সামরিক অভিযানের কারণে ইইউ সদস্য দেশগুলোর স্থায়ী প্রতিনিধিরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দশম প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। শুক্রবার ইইউ কাউন্সিলের সুইডিশ প্রেসিডেন্ট দপ্তর থেকে এই প্যাকেজের ঘোষণা করেন। বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থার নতুন প্যাকেজের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে দ্বৈত-ব্যবহার প্রযুক্তি সম্পর্কিত কঠোর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া যারা রাশিয়ায় ড্রোন সরবরাহ করছে আর মিথ্যা তথ্য প্রচারের মাধ্যমে সহায়তা করছে অর্থাৎ যুদ্ধে সহায়তাকারী ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে লক্ষ্য নির্ধারণ করা। প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞা লিখিত পদ্ধতিতে ইইউ কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হতে হবে। এর পরে তা ইইউর অফিশিয়াল জার্নালে প্রকাশিত হবে এবং কার্যকর হবে। গত কয়েক সপ্তাহে ইইউ নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছিলেন নিষেধাজ্ঞার ১০ম প্যাকেজের জন্য।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *