অর্থ সংকটে বিপাকে পাকিস্তানের ওষুধ শিল্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: পাকিস্তানের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশটির ওষুধ শিল্পে। ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে বহুমুখী সংকট। খবর দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের। 

মার্কিন ডলারের ঘাটতির কারণে ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতেও হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরিতে কাঁচামাল সংগ্রহের দিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ কোটি ডলারে নেমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। এ কারণে দেশটি ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ওষুধ, বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন, ইমিউনোগ্লোবুলিন এবং জৈবিক পণ্যগুলোর জন্য ওষুধ এবং সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদানগুলোর (এপিআই) মতো মৌলিক আমদানির জন্য অর্থ প্রদান করতে পারছে না।

অপারেশন থিয়েটারগুলোতে দুই সপ্তাহেরও কম চেতনানাশক মজুদ রয়েছে। এছাড়াও ওষুধ প্রস্তুতকারকদের কাছে মাত্র চার-পাঁচ সপ্তাহের কাঁচামাল মজুদ রয়েছে।

পাকিস্তান কিডনি ও লিভার ইনস্টিটিউট ও রিসার্চ সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি কার্ডিওলজি ও ক্যান্সার হাসপাতালে করোনারি স্টেন্ট, ক্যানুলা, সিরিঞ্জ, এমনকি গ্লাভসের মতো চিকিৎসা সরঞ্জাম কম থাকার কারণে ডাক্তাররা নিরবচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারছেন না।

অন্যদিকে মেডিকেল কোম্পানির স্টেকহোল্ডাররা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকে অবিলম্বে তাদের উদ্বেগ এবং দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য এবং রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছে।

তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, কারণ অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিভিন্ন ওষুধ তৈরির কাঁচামাল করাচি বন্দরে আটকে আছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে করাচি বন্দরে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, কাঁচামাল এবং চিকিৎসা সরঞ্জামসহ হাজার হাজার শিপিং কনটেইনার আটকে আছে।

গত বছরেও দেশটিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তবে এ বছর পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

প্রসঙ্গত, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ ছাড়াও প্রায় ৪৭ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে এবং ৪০ শতাংশ ভারত থেকে আমদানি করে।

নিউট্রো ফার্মার সিইও হামিদ রাজা বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি কিন্তু এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কোম্পানিগুলো টাকা দিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোও বন্দরে আটকে আছে কিন্তু ব্যাংকগুলো সেগুলো ছাড়তে অনিচ্ছুক।

তিনি অভিযোগ করেন, ব্যাংকের পদ্ধতি ধীরগতি হওয়ার কারণে আমরাও অপেক্ষা করছি। ব্যাংকগুলো অজুহাত দিচ্ছে যে তাদের কাছে ডলার নেই এবং তাদের স্টেট ব্যাংক থেকে কোনো নির্দেশনা নেই।

তিনি দাবি করেন, ওষুধ শিল্পকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে ডলারে অর্থ বরাদ্দ করা উচিত এবং এ সমস্যার সমাধান করা উচিত।

অর্থনৈতিক সংকট শুরুর বহু আগে থেকেই ওষুধ শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা সরকারকে এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছিল কিন্তু সরকার তখন তাদের কথা শুনেনি। এখন স্টেকহোল্ডারদের দাবি হলো যে করেই হোক সরকারকে ওষুধ শিল্পকে চাঙ্গা করে তুলতে ১৫০০ লাখ ডলারের ব্যবস্থা করতে হবে।

পাকিস্তান ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিপিএমএ) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারুক বুখারি বলেছেন, আমরা স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের সাথে আলোচনা করছি। তারা আমাদের প্রয়োজনীয় আমদানি সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সংকটের সম্ভাব্য সমাধান খোঁজার জন্য ওষুধ শিল্পকে আগামী সপ্তাহে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এসবিপি গভর্নর জামিল আহমেদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে তাদের বৈঠক হবে। তিনি এ বৈঠক থেকে ইতিবাচক কিছু আশা করছেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *