কাদের সিদ্দিকীর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আ.লীগ নেতা, জোটবদ্ধের ইঙ্গিত

নিউজ ডেস্ক:: মুক্তিযুদ্ধকালীন কাদেরিয়া বাহিনীর বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেওয়ার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস।

সরকার ও দলের পক্ষ থেকে এই দুইজন কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীও বক্তব্য রাখেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ না দিলেও একজন মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতি রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ঐক্য হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন কাদেররিয়া বাহিনীর সাবেক প্রশাসক আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিম জানান, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তারপর ঢাকার বাইরে তিনি প্রথম সফর করেন টাঙ্গাইল। ওই বছর ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কাদের সিদ্দিকী তার বাহিনীর সব অস্ত্র বঙ্গবন্ধুর কাছে জমা দেন। বিভিন্ন প্রকারের এক লাখ চার হাজার অস্ত্র সেদিন বঙ্গবন্ধুর কাছে দেওয়া হয়েছিলো। সেই ঐতিহাসিক দিনটির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কাদেররিয়া বাহিনীর পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল শহীদ মিনারে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠানে আসতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, কাদের সিদ্দিকী ইতিহাসের গর্বিত সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের মহামানব। তার বীরত্বগাথা ইতিহাসে বিরল। যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়ে তিনি এক লাখ চার হাজার অস্ত্র বঙ্গবন্ধুর কাছে জমা দিয়েছিলেন। এটি একটি বিস্ময়। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে কাদেরিয়া বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে মনোভাব প্রকাশ- তা আমার জন্য বিব্রতকর। আমরা এই অনুষ্ঠানকে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেখতে চাই। সম্পর্কের কোন অবনতি থাকলে তা জাতীয়ভাবে নিতে চাই না। জাতীয়ভাবে আমরা মনে করি এটি একটি ঐতিহাসিক দিন।

আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে এ অনুষ্ঠানে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করেছেন।

তিনি কাদের সিদ্দিকীকে বঙ্গবন্ধুর স্বার্থক আদর্শিক পুত্র অবহিত করে বলেন, আসুন আমরাও আপনাকে নিয়ে পথ চলতে চাই। ২০২৪ সালে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে এক বৃত্তে থাকবেন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীরা। স্বার্থক পিতার স্বার্থক উত্তরসূরি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়ব।

কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদান দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি বুলবুল খান মাহবুব, কবি আল মুজাহিদী, আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর সহধর্মিণী নাসরিন সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছালাম চাকলাদার, আবুল কালাম আজাদ বীরবিক্রম, হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক প্রমুখ।

গত ২৩ ডিসেম্বর কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সপরিবারে গণভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। তারপর থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যাচ্ছেন। ওই সাক্ষাতের পর এটিই ছিল কাদের সিদ্দিকীর টাঙ্গাইলে প্রথম কোনো সভা।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *