নাদিয়াকে নিয়ে বড় স্বপ্ন ছিল গার্মেন্টকর্মী বাবার

নিউজ ডেস্ক:: নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টে চাকরি করে মেয়ে নাদিয়া আক্তারকে রাজধানীর বেসরকারি নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি করেছিলেন মো. জাহাঙ্গীর। তিন মেয়ের মধ্যে বড় নাদিয়াকে নিয়ে ছিল বড় স্বপ্ন। অথচ ক্লাস শুরুর এক সপ্তাহের মাথায় ভিক্টর বাসের চাপায় সড়কে প্রাণ গেল নাদিয়ার। 

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের দুই চাকার মাঝামাঝি স্থানে পড়ে যান নাদিয়া। এরপরও বাসটি না থামিয়ে তড়িঘড়ি করে ওই ছাত্রীর ওপর দিয়ে গাড়িটি চালিয়েই সটকে পড়েন বাসচালক। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর হাসপাতালে নিলে সেখানে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি ওঠে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বাসের যাত্রী হাসান মামুন জানান, ভিক্টর পরিবহণের বাসটি মোটরসাইকেলটি ধাক্কা দেয়। এতে ছেলেটি পড়ে যায় ফুটপাতের দিকে এবং মেয়েটি গাড়ির দিকে। মেয়েটির মাথা বাসের সামনের ও পেছনের চাকার মাঝামাঝি স্থানে পড়ে। আমরা চালককে বাসটি থামাতে বলি। সে না থামিয়ে বেপরোয়া গতিতে টেনে যায়। এতে মেয়েটির মাথা পেছনের চাকার নিচে চলে যায়। ঘটান্থলেই নিস্তেজ হয়ে যায় নাদিয়ার দেহ। পরে চালক গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়। বাসটি জব্দ করে পুলিশ। নাদিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জাহিদুল ইসলাম বলেন, চালকের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। কারণ মোটরসাইকেলটি পড়ে যাওয়ার পর একজন চিৎকার করে বলছিল- ‘এই ড্রাইভার দাঁড়ান, বাঁচবে বাঁচবে’। তখন তো চালকের টান দেওয়া উচিত হয়নি। দাঁড়ালে অন্তত এটা বোঝা যেত যে অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাটি ঘটেছে এবং সে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে; কিন্তু মাথার ওপর দিয়ে বাসটি চালিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এটা অনেকটাই স্পষ্ট যে চালকের খামখেয়ালিতে মেয়েটি মারা যায়।

স্বজনরা জানান, পড়াশোনার জন্য নাদিয়া রাজধানীর উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের একটি মেসে থাকতেন। পরিবার থাকত নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায়। ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ছুটে আসেন নাদিয়ার স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে পুরো এলাকা।

ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তার গৃহিণী মা পারভিন আক্তার। এসেই বিলাপ করতে থাকেন। চিৎকার করে বলেন- ‘আমার মা কই রে…? এক সপ্তাহ আগে ভার্সিটিতে রেজিস্ট্রেশন করে দিয়ে আসলাম। আল্লাহ এক সপ্তাহও পার হতে দিলা না। আমার মেয়েটাকে নিয়ে গেলা? আমি তোমার কাছেই আমার মাকে (মেয়ে নাদিয়া) ছেড়ে দিলাম।’

ঘটনার সময় নাদিয়া যে মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ছিলেন এর চালক ছিলেন তার বন্ধু মেহেদী হাসান। নাদিয়া প্রাণ হারালেও মেহেদী অক্ষত আছেন। তিনি জানান, তারা ঘুরতে বের হয়েছিলেন। এর মধ্যেই গাড়িটি এসে আচমকা মোটারসাইকেলটি ধাক্কা দেয়। এরপর চিৎকার করলেও বাসটি না থামিয়ে দ্রুতগতিতে চালিয়ে যায়।

ভাটারা থানার ওসি এবিএম আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। বাসটি আটক আছে। আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

এদিকে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান স্থায়ী ক্যাম্পাস রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের উল্টো পাশের কাউলার এলাকায়। বাসচাপায় সহপাঠী নিহতের পর এই এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে নাদিয়ার সহপাঠী ও সতীর্থরা। এতে বিমানবন্দর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। আন্দোলন থেকে নিরাপদ সড়ক ও অভিযুক্ত চালকের বিচার দাবি করেন তারা। পরে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আশ্বাসে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেন।

এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খান  বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রীর বন্ধুরা কিছু দাবি নিয়ে কাউলার এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন। পুলিশ তাদের দাবির বিষয়গুলো শুনেছে। জড়িতদের বিচারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে বলে জানিয়েছে। এরপর তারা ফিরে গেছেন।

তবে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে  জানানো হয়, শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় তারা শোক জানিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি নিয়ে এসেছিল। পরে জড়িতদের বিচারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছে। এ বিষয়টি তাদের জানানো হলে তারা ফিরে আসেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *