জিতল কাতার,বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার: আবু তাহের মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন

শিরোনাম দেখে অনেকে হয়ত ভাবছেন, এটা আবার কেমন কথা? আসলে এটাই হয়েছে এবার। দীর্ঘ একমাসের টানটান উত্তেজনা শেষে পর্দা নেমেছে বিশ্বকাপ ফুটবলের। তিনযুগ পর অবশেষে কাপ উঠেছে আর্জেন্টিনার ঘরে। সে সাথে সর্বকালের সেরা ফুটবলারের তকমাটাও নিজের করে নিয়েছেন খুদে জাদুকর খ্যাত মেসি। খালি চোখে আমরা সবাই এটাই দেখেছি এবং এটাই মনেপ্রাণে মেনে নিয়েছি যে, আর্জেন্টিনা ফাইনালে ম্যাচ জিতে ফুটবলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে পেছনের খেলাটা অন্য জায়গায়। এবার কিন্তু জিতেছে স্বাগতিক দেশ কাতার।

২০১০ সালে কাতার যখন ২০২২ সালের ফুটবল আয়োজক হিসেবে নির্বাচিত হয়, তখন পশ্চিমারা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। বিশেষ করে সাদা চামড়ার সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপিয়ানরা। মধ্যপ্রাচ্যের একটা (মুসলিম) দেশ এতবড় একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, তারা যেন কিছুতেই তা মেনে নিতে পারছিল না। তাই শুরু থেকে এর বিরোধিতায় নামে তথাকথিত এসব মোড়লরা। এর জেরে ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ব্লাটারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে তাকে ২০২৮ পর্যন্ত সংস্থাটির যেকোনো কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর একটি ছিল, তিনি নাকি ঘুষ নিয়ে কাতারকে আয়োজক বানিয়েছেন। কিন্তু ইউরোপীয়ানরা অভিযোগটি প্রমাণ করতে না পারায় সে যাত্রায় কাতার রক্ষা পায়। এরপর অভিযোগ আনা হয় কাতারে নাকি স্টেডিয়াম বানাতে গিয়ে অসংখ্য শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগটি সামনে এনে কথিত মানবাধিকারের ধ্বজাধারী পশ্চিমারা কাতার বিশ্বকাপ বয়কটের ডাক দেয়। অথচ এরাই যুগ যুগ ধরে এশিয়া ও আফ্রিকায় লাখ লাখ মানুষকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নির্বিচারে মেরেছে। এমনকি উত্তর আমেরিকায় লাখ লাখ উপজাতি তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে।

কাতার পশ্চিমাদের এসব কানে না তুলে যখন নিজের আয়োজনের দিকে মনযোগ দেয়, তখন বলা হয়- কাতার সমকামিতা ও নেশাজাতীয় দ্রব্য নিষিদ্ধ করে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। এবার কাতারও বেঁকে বসে। তারা সাফ জানিয়ে দেয়, এখানে আসলে তাদের আইন ও নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানাতে হবে।
ওদিকে পশ্চিমারাও ‘বয়কট কাতার’ জোরদার করে। পশ্চিমাদের এই বয়কটের পেছনে কতগুলো কারণ মোটামুটি ধারণা করা যায়। যেমন, তারা সবকিছুতে নিজেদেরকে সুপিরিয়র/হর্তাকর্তা ভাবে, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো মুসলিম দেশ বিশ্বকাপের আয়োজক হউক- সেটা তারা সহ্য করতে পারেনি, তাছাড়া নভেম্বর-ডিসেম্বরে ইউরোপের বিভিন্ন লীগের খেলা অনুষ্ঠিত হয়- যেটা তাদের আয়ের অন্যতম উৎস।

সবকিছুর মিলিয়ে কাতার যেন তাদের ‘বাড়া ভাতে ছাই’ দিয়েছে। তাই তারা কোনোভাবেই চায়নি কাতার এই আয়োজনটা করুক। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত কাতার বিশাল বাজেটের এই আয়োজন সফলভাবে শেষ করেছে। এর ফলে কাতার আর্থিক লাভের চেয়েও কূটনীতিকভাবে লাভবান হয়েছে বেশি। মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানকে সে তার দেশে নিতে পেরেছে। অথচ কয়েক বছর আগে এদের অনেকেই পশ্চিমাদের মদদে তাকে অবরোধ দিয়েছিল। তাই সবদিক বিবেচনায় পর্দার আড়ালে জয়টা কিন্তু কাতারেরই হয়েছে।

লেখক : আবু তাহের মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন।
ব্যাংকার ও সাবেক গণমাধ্যম কর্মী।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *