নিউজ ডেস্ক:: ব্যাংকে তারল্যের (ক্যাশ টাকা) কোনো সংকট নেই। এরপরও এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে এবং এ কারণে আমানত তুলে নেওয়া উচিত বলে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গুজব বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠকে জানানো হয়, আগের বছরের তুলনায় দেশে খাদ্যের মজুত ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেড়েছে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তসমূহ সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এ বছর জুনের পর অর্থাৎ ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে খাদ্যশস্য মজুত ছিল ১৬.০৭ লাখ মেট্রিক টন। মন্ত্রিপরিষদ শঙ্কা প্রকাশ করেছে আগামী বছর তিন কারণে অর্থনীতিতে সংকট দেখা দিতে পারে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং চীনের পণ্য আসা কমে যাওয়ায় আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ‘ক্রাইসিস’ দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগামীতে সংকট কাটাতে ছয় পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তা হচ্ছে- খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বিদেশে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণ, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা, দেশে খাদ্য মজুত ঠিক রাখা এবং খাদ্য আমদানিতে উৎসে কর বাদ দিয়ে আমদানিকারককে স্বস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।
সংকট মোকাবিলায় সবাইকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিভিন্ন শস্যের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থার্ড পার্টির কাছে না গিয়ে সরাসরি বিদেশ থেকে খাদ্যপণ্য কেনারও নির্দেশনা দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৪.১ শতাংশ। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০২১-২০২২ অর্থবছরের কার্যাবলী সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৫ শতাংশ (সাময়িক), বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ অর্থবছরে দেশে রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। মোট রপ্তানি হয়েছে ৫২.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৩.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২১.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময়ে ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৯ বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থান পেয়েছেন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এক হাজার ৮৩৬টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা; যা বরাদ্দের ৯২.৮০ শতাংশ। এ অর্থবছরে ৩৩৩টি প্রকল্প শেষ হয়েছে।
এছাড়া সার, সেচ কাজে বিদ্যুৎ ও আখসহ বিভিন্ন খাতে মোট ১৫ হাজার ১৭২.৭৯ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। আর জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে ৬৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর এই অর্থবছরে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী শতভাগে উন্নীত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ১৮ দশমিক ৪৭ কোটি ও ইন্টারনেট গ্রাহক প্রায় ১২ দশমিক ৬২ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। আর ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে সাড়ে তিন গিগাহার্জ ব্যান্ডে ফাইভজি সেবা চালু করা হয়েছে। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
জমি চাষ না করলেই তা খাস হয়ে যাবে- এরকম খবরকে গুজব বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তিনি বলেন, জমি চাষ না করলেই তা খাস হয়ে যাবে না। এটা একটা গুজব। এটা বন্ধ করার নির্দেশনা দেন তিনি।