বুয়েটের ফারদিন হত্যা নিয়ে কী বলছে ডিবি?

নিউজ ডেস্ক:: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মাথা ও বুকে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। লাশের ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এটি হত্যাকাণ্ড।

ফারদিনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য জানার অপেক্ষায় তার স্বজন ও সহপাঠীরা। লাশ উদ্ধারের পর প্রেমঘটিত বিষয়কে ঘিরে প্রাথমিক তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। তার এক বান্ধবীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জানা যায়, ৪ নভেম্বর ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার পর ৫ নভেম্বর রামপুরা থানায় জিডি হয়। বিভিন্ন এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করে। কিন্তু সোমবার নারায়ণগঞ্জ থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের তৎপরতা কমে যায়। শুরু হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাবের তৎপরতা।

এরই মধ্যে ফারদিনের বান্ধবী ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী বুশরা ও তার আরেক বন্ধু শীর্ষ সংশপ্তকে আটক করেছে ডিবি। এ ছাড়া ফারদিনের স্বজনসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব। এরই অংশ হিসেবে ফারদিনের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বাবুকেও র্যাব কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়েছে।

নিখোঁজের পর বুশরাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সোমবার রাতে লাশ উদ্ধারের পর বুশরা ও সংশপ্তকে ফের ডেকে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাতেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, আমরা দুজনকে আটক করেছি। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে— নারীঘটিত কোনো বিষয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অন্য কোনো কারণ আছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আটক দুজনকে এখনো বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আপাতত জিডির সূত্র ধরে তদন্ত চালাচ্ছি। যেহেতু নারায়ণগঞ্জ থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাই সেখানে মামলা হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি রাজিব আল মাসুদ জানান, ফারদিন খুনের ঘটনায় ডিবির একাধিক টিম কাজ করছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ফারদিনের মোবাইল ফোনের লোকেশন চেক করে দেখা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিচরণ ছিল। তবে তা ফারদিনসহ নাকি তার মোবাইল অন্য কেউ বহন করেছে, তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে র্যাবের একাধিক টিম।

ফারদিন পড়ালেখার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজেও জড়িত ছিলেন। তার বাবা নূর উদ্দিন রানা জানান, ডিবেটিংয়ে ফারদিন খুব ভালো ছিল। আগামী মাসেই (ডিসেম্বরে) স্পেনে ওয়ার্ল্ড ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল তার। তার পাসপোর্ট রেডি। তিনি বলেন, শত্রুতার কারণে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। ওর লাশের সঙ্গে মানিব্যাগ, অকেজো মোবাইল, ঘড়ি সবই পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

নূর উদ্দিন রানা বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার নয়ামাটিতে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন ফারদিন। তার মেজ ভাই আবদুল্লাহ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই তামিম নূর এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। নূর উদ্দিন রানা ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, শনিবার বুয়েটে ফারদিনের পরীক্ষা ছিল। শুক্রবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে সে ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। রাতে বাসায় অথবা বুয়েটের হলে থাকার কথা ছিল তার। কিন্তু রাত সোয়া ১১টার পর থেকেই তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। একপর্যায়ে ফারদিনের মোবাইলের শেষ অবস্থানের সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় রামপুরা এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা মেলে ফারদিনের। তাকে শেষবার দেখা যায়, রামপুরা (ব্রিজের পাশে, ট্রাফিক পুলিশবক্সের একটু আগে), শুক্রবার রাত ১০টা ৪৫ থেকে ১১টার মধ্যে। তখন সঙ্গে তার এক বান্ধবী ছিলেন। এর পর রামপুরা থানায় এ ব্যাপারে নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন নূর উদ্দিন রানা।

তিনি বলেন, আমার ছেলে একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। বুয়েটে ভর্তি হলেও আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কারণে সে হলে থাকতে চাইত না। বাসায় থেকেই ক্লাস করত। ফারদিন ডিবেটিং ক্লাবসহ নানা ধরনের সোশ্যাল ওয়ার্কের (সমাজসেবা) সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তবে সে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল না। ফারদিন টিউশনি করত, বাসায় সে তার ভাইদের পড়ালেখায় সহযোগিতা করত। আমি আমার সন্তানকে ফিরে পাব না। কিন্তু বিচার হোক, এটি চাই। মেধাবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে, এটি বন্ধ হোক।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *