নয়াদিল্লিতে স্কুল বন্ধ অর্ধেক কর্মীকে হোম অফিসের নির্দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: শীতকাল শুরু হতে না হতেই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরে পরিণত হয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি।

পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, সেখানে স্বাভাবিক শ্বাস নেওয়াই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দূষণ দৌরাত্ম্যে অনেক বাসিন্দা অসুস্থ বোধ করছেন।

শিশু ও বয়স্করা তুলনামূলকভাবে বেশি অসুস্থ হচ্ছে। শহরটির বায়ুদূষণ দুর্যোগপূর্ণ হয়ে ওঠায় সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শনিবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে দিল্লির অর্ধেক সরকারি কর্মীকে ঘরে থেকে অফিসের কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি পণ্য পরিবহণ ছাড়া দিল্লিতে ডিজেলচালিত ট্রাক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। খবর এপি, পিটিআই ও এএফপির।

প্রতি শীতেই নয়াদিল্লির বায়ুমানের অবস্থার চরম আকার ধারণ করে। এতে শহরটির দুই কোটি বাসিন্দা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে। মূলত ঠান্ডার পাশাপাশি নির্মাণকাজের ভারী ধুলা, যানবাহনের কার্বন নিঃসরণ ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর ফসলের নাড়া পোড়ানোর ধোঁয়ায় দিল্লির বায়ুমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সিস্টেম অব এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ জানায়, নাড়া পোড়ানোয় সৃষ্ট ধোঁয়ার কারণে বায়ুদূষণ হয়েছে।

পাঞ্জাবের ফরিদকোট গ্রামে ধান কাটার পর মাঠের নাড়া পোড়ানো হয়। বলা হয়-দিল্লির বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ এ ধোঁয়া। ধোঁয়ায় অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

কারওবা চোখে জ্বালাপোড়া অনুভূতির মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে। অনেকের কাশি-হাঁচি থামছেই না। এমন পরিস্থিতিতে দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। শুক্রবার দিল্লির লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, রোগীদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। শিশু ও বয়স্করা তুলনামূলকভাবে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দূষণের জেরেই অধিকাংশ মানুষ অসুস্থ বোধ করছেন। সে কারণে বাড়ির বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। বিশেষত, সকালের দিকে বাড়ির বাইরে না বেরোনোই ভালো। একই সঙ্গে রোজ বেশি করে শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, বায়ুদূষণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত দিল্লির প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে। এছাড়া অন্য শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের বাইরে খেলাধুলা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

জোড়-বিজোড় ভিত্তিতে যানবাহন চলাচল নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। দিল্লির পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রী গোপাল রাই বলেছেন, বায়ুদূষণ দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছানোয় দিল্লি সরকারের অর্ধেক কর্মীকে ঘরে থেকে দাপ্তরিক কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অর্ধেক কর্মীকে বাড়িতে অফিস করার একটি নির্দেশনা জারি করা হবে।

দূষণের জেরে দিল্লির বাতাসের গুণমান কার্যত তলানিকে ঠেকেছে। শনিবার সকালে সেখানে বাতাসের গুণমান সূচক ছিল ৪৩১ পয়েন্ট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এয়ার কোয়ালিটি সূচক (একিউ সূচক) অনুযায়ী, এ পয়েন্ট রীতিমতো ‘ভয়াবহ’।

এদিকে, বায়ুদূষণের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণকারী যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) প্রকাশিত সূচকে দেখা যায়-শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় নয়াদিল্লির বাতাসে ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর ক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম ২ দশমিক ৫ ছিল ৩৫৩ পয়েন্ট। এর অর্থ হলো-তখন বায়ুমান ছিল ‘দুর্যোগপূর্ণ’ ক্যাটাগরিতে।

একিউআই অনুযায়ী-পিএম ২ দশমিক ৫ বস্তুকণা শূন্য থেকে ৫০ পয়েন্ট পর্যন্ত থাকলে বায়ুর মান ‘ভালো’ বলে গণ্য করা হয়, ১০০ পয়েন্ট পর্যন্ত থাকলে ‘সন্তোষজনক’, ১৫০ পর্যন্ত ‘কিছু মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর’, ১৫১-২০০ পর্যন্ত ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ পর্যন্ত ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ও ৩০১ বা এর বেশি হলে বায়ুদূষণকে ‘বিপর্যয়কর’ বলা হয়।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *