নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত বিমানের ঊর্ধ্বতনরাও: ডিবির হারুন

নিউজ ডেস্ক::বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ‘জড়িত’ বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, প্রশ্নপত্র বিক্রির বিনিময়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে দুই থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।

গতকাল পরীক্ষা শুরু দেড় ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিমানের জুনিয়র পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের পর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসে এসব তথ্য দেন ডিবির হারুন।

ডিবিপ্রধান জানান, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় নাম আসা সরকারি মালিকানার এয়ারলাইন্সটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

শুক্রবার বিকাল ৩টায় বিমানে ১০টি পদে নিয়োগে এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর বাতিল করা হয় পরীক্ষা।গ্রেফতাররা হলেন- আওলাদ হোসেন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, এনামুল হক, মো. হারুন-অর-রশিদ ও মাহফুজুল আলম।

এদিকে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নে যারা চাকরি পেয়েছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানানা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ।

হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতারদের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত আছেন।

নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর থেকে তারা পরিকল্পনা শুরু করেন- কীভাবে প্রশ্নফাঁস করবেন এবং কীভাবে সেগুলো বিতরণ করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরীক্ষার আগের দিন ৪-৫ জন মিলে প্রশ্নফাঁস করেন। পরে সেগুলো টাকার বিনিময়ে সরাসরি ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিতরণ করেন। প্রশ্নগুলো তারা সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছে। এ ছাড়া গরিব পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন দিয়ে তারা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই নিয়েছেন, যে তাদের বাড়ি কিংবা জমিজমা লিখে দেবে। গ্রেফতাররা এর আগেও বিভিন্ন প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে প্রশ্নফাঁস হয়েছে সে রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করব। গ্রেফতাররা জানিয়েছে, এর আগেও কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে তারা লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সে টাকার ভাগ তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও দিয়েছেন। এসব বিষয়ে গ্রেফতারদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করব।

ডিবির হারুন বলেন, বিমানের ডিজিএম ও জিএমের সমন্বয়ে যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, তাদের কাজ ছিল প্রশ্নফাঁসের মতো বিষয় রোধ করা। কিন্তু তাদের চোখের আড়ালে কীভাবে প্রশ্নফাঁস হলো- তা আমরা জানতে চাইব।

চক্রটি এই প্রশ্ন কতজনের কাছে বিতরণ করেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আমরা সঠিক সংখ্যাটি জানাতে পারব।

অপর আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা অভিভাবকদেরও বলেছিলাম- প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনা তাদের চোখের সামনে আসলে তারা যেন আমাদের জানায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে কোনো অভিভাবক আমাদের তথ্য দেননি। তিনি জানান, আইন বিচার বিশ্লেষণ করে মামলা করা হচ্ছে- যাতে আসামিরা সর্বোচ্চ সাজা পান। আমরা প্রশ্নফাঁসের ঘটনার আরও গভীরে যাব।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *