বিমানবন্দরে প্রবাসীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করত তারা

নিউজ ডেস্ক::  রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করে তাদেরকে কৌশলে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নেওয়া একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গ্রেফতাররা হলো- আমির হোসেন (৫১), লিটন মিয়া ওরফে মিল্টন (৪৮), আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ (৩৫) ও জাকির হোসেন (৪০)।তাদের মধ্যে আমির হোসেন এই চক্রের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

চক্রটিকে গ্রেফতারের পর তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আর মঈন।

র‌্যাব জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের উল্টো দিকে একটি ফাস্টফুডের দোকানে ১৫ বছর ধরে কাজ করে আসছেন আমির হোসেন। তিনি আসলে বিমানবন্দর এলাকাকেন্দ্রিক প্রতারক চক্রের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ‘অজ্ঞান পার্টির’ খপ্পরে পড়ে এক প্রবাসীর সর্বস্ব হারানোর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আমিরসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি।

কমান্ডার খন্দকার আর মঈন বলেন, আমির হোসেনের নেতৃত্বে ওই চক্রটি বিমানবন্দর এলাকায় বিভিন্ন পেশার আড়ালে প্রতারণা করে আসছে গত ১৫ বছর ধরে।৫১ বছর বয়সী আমিরের বাড়ি বরিশালে। গত ১৫ বছরে তিন শতাধিক প্রবাসীকে অজ্ঞান করে মালামাল লুটে নিয়েছেন। ১৫টির বেশি মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।আমিরের সঙ্গে গ্রেফতার লিটন মিয়া ওরফে মিল্টন (৪৮) একজন মাইক্রোবাস চালক। আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ (৩৫) গয়নার ব্যবসায় জড়িত। আর জাকির হোসেন (৪০) পেশায় ছাপাখানার কর্মী।

তিনি বলেন, ‘চক্রের সদস্য সংখ্যা আট থেকে ১০ জনের মত। তাদের অনেকেই এখন কারাগারে। জেল থেকে বের হয়ে তারা আবার একই পেশায় নামেন। তারা মূলত বিদেশ থেকে আসা সেইসব প্রবাসীদের টার্গেট করতেন, যাদের নেওয়ার জন্য কোনো আত্মীয়-স্বজন বিমানবন্দরে আসেননি। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর কুয়েতফেরত এক প্রবাসীকে লুট করে চক্রটি। সেদিন ভোরে বিমানবন্দরে নেমে বগুড়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই প্রবাসী। আমির হোসেনের একজন সহযোগী তখন তার সঙ্গে আলাপ জমান।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব কমান্ডার মঈন বলেন, ‘ওই প্রবাসীর বিশ্বাস অর্জনের পর লাগেজ ও পাসপোর্ট হাতে দৃশ্যপটে হাজির হন আমির। মাত্র কুয়েত থেকে  এসেছেন– এমন পরিচয় দিয়ে আমির বলেন, তারও গন্তব্যও বগুড়া। নিজের কথা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য আমির পকেট থেকে কুয়েতি মুদ্রা বের করে দেখান। নিজের সহযোগীদের নিকটাত্মীয় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন ওই প্রবাসীর সঙ্গে।’

‘এরপর তারা বলে যে তাদের কাছে অতিরিক্ত একটি বাসের টিকিট আছে। তাদের একজন আত্মীয় যাওয়ার কথা ছিল বলে কাটা হয়েছিল, কিন্তু তিনি যাচ্ছেন না। ওই প্রবাসী চাইলে তাদের সঙ্গে যেতে পারেন। তাদের প্রস্তাবে প্রবাসী রাজি হয়ে গেলে তারা উত্তরার আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে বগুড়াগামী একটি বাসে উঠে বসেন। আমির এবং ওই প্রবাসী পাশাপাশি আসনে বসেন। গ্রেফতার লিটন মিয়া পাশের আরেকটি আসনে বসেন। বাস চলতে শুরু করলে চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে প্রবাসীকে অজ্ঞান করে ফেলেন আমির।এরপর তার পকেট থেকে বাসের লাগেজ ট্যাগ বের নেন তারা। সিরাজগঞ্জ এলাকায় তার লাগেজ নিয়ে বাস থেকে নেমে যান আমির ও লিটন মিয়া। পরে বাসের সুপারভাইজার বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘ওই ব্যক্তির ব্যাগে প্রায় আট ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ দামি জিনিসপত্র ছিল। স্বর্ণালঙ্কারগুলো শ্যামপুরের জুয়েলার্স দোকানের মালিক পারভেজের কাছে বিক্রি করেন আমির ও তার সহযোগীরা। আট ভরি স্বর্ণ নিয়ে সাড়ে ছয় ভরির দাম ধরে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা আমিরকে দেন পারভেজ। সেখান থেকে লিটন মিয়াকে এক লাখ। জাকির ও আরেক ব্যাক্তিকে ৫০ হাজার করে টাকা দেন আমির। বাকি টাকা নিজে রাখেন বলে আমির জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানিয়েছেন।’

মঈন জানান, পরে পারভেজকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে লুটকৃত স্বর্ণের কিছু অংশ গলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় পারভেজের কাছে লুটের মাল বিক্রি করেছেন আমির। গ্রেফতার হওয়া জাকির ও অন্য আরেকজন এই লুটে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। তারাও লুটের ভাগ পেয়েছে।

র‌্যাব জানায়, ‘আমির বিমানবন্দর এলাকার একটি ফাস্টফুডের দোকানে ১৫ বছর ধরে কর্মরত। তিনি তিন-চারদিন পরপর এরকম একজন করে ভিকটিমকে টার্গেট করেন। এ বছরই তিনি দুই বার গ্রেফতার হয়েছেন। গত জানুয়ারিতে সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তির কাছ থেকে একইভাবে সর্বস্ব লুটে নেয় আমিরের চক্র। এপ্রিলে আরেক প্রবাসীকে লুট করেন তারা।

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘বিমানবন্দর রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রীক অজ্ঞান পার্টি চক্রের নেতৃত্ব এখন আমিরের হাতে। আমির হোসেন কখনো বিদেশে যাননি। কিন্তু তিনি বিমানবন্দর এলাকায় সবসময় একটি পাসপোর্ট হাতে ঘোরেন। তার সঙ্গে লাগেজ থাকে। লাগেজের ওপর স্টিকার লাগানো থাকে যাতে মনে হয় তিনি বিদেশ থেকে ফিরলেন।তার সহযোগী লিটন মিয়া পেশায় মাইক্রোবাস চালক। এরা বিমানবন্দরে এলাকায় মাইক্রোবাসসহ অবস্থান করেন। যারা উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে ইচ্ছুক তাদের মাইক্রাবাসে ওঠান। পথে চেতনানাশক প্রয়োগ করে সব লুটে নেন। লিটনও একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন।’

আমিরের বিরুদ্ধে শুধু প্রতারণা ও লুটের মামলাই পাওয়া গেছে ১৫টি। এ ছাড়া আরও ফৌজদারি মামলাও রয়েছে। কয়েকবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে প্রতিবারই প্রতারণায় ফিরে গেছেন আমির, জানান র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *