স্থানীয় সময় সকাল ৮টা (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা) থেকে শুরু হওয়া ভোট শেষ হচ্ছে বিকাল ৫টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ২টায়)।
আজ রাতেই জানা যাবে কে হচ্ছেন ব্রাজিলের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট লুলা নাকি বলসোনারো। এবারের নির্বাচনের প্রধান দুই প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো।
ব্যাপক প্রচারণা আর প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নিয়ে এ ক’দিন ভোটারদের ‘দ্বারে দ্বারে’ ঘুরেছেন প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনি জরিপে এগিয়ে রয়েছেন লুলা।
‘দারিদ্র্যের শত্রু’ হিসাবেই তাকে জানেন ভোটাররা। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জরিপের ফল অনুযায়ী ১৪ পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমাজন ‘বনখেকো’ বলসোনারো। এএফপি, সিএনএন।
নির্বাচনের খুঁটিনাটি : আজ নির্বাচনের প্রথম ধাপ। এদিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি দেশের ২৬টি রাজ্যের জন্য গভর্নর, সিনেটর, ফেডারেল এবং রাজ্য ডেপুটিও বেছে নেবেন ভোটাররা।
ব্রাজিলীয় নির্বাচনি ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট হতে হলে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। যদি কোনো প্রার্থী সেই সীমা অতিক্রম করতে না পারেন, তাহলেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোট। আর সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন সবচেয়ে বেশি ভোটপ্রাপ্ত দুই প্রার্থী। আজকের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন ১৫ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ব্রাজিলিয়ান।
নির্বাচনি কর্তৃপক্ষ আশা করছে, নির্ধারিত সময়ের ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যেই জানা যাবে কে হচ্ছেন প্রথম ধাপের বিজয়ী। যদি মোট বৈধ ভোটের ৫০ শতাংশ কোনো প্রার্থীই অর্জন করতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন।
ফলের আগেই সন্দেহ : নির্বাচনি প্রচারণায় আগে থেকেই হিংসাত্মক বক্তৃতা দিয়ে আসছেন জাইর বলসোনারো। আগেভাগেই ফলাফল নিয়ে সন্দেহের বীজ বপনের চেষ্টা করছেন তিনি। এক প্রচারণায় তিনি দাবি করেছেন, নির্বাচনে যদি অন্তত ৬০ শতাংশ ভোট না পান- তবে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
তিনি ও তার দল আরও দাবি করেছে ব্রাজিলের ইলেকট্রনিক ব্যালট সিস্টেম জালিয়াতির জন্য সংবেদনশীল। যদিও ব্রাজিলে ইলেকট্রনিক ব্যালটে ভোট জালিয়াতির কোনো প্রমাণিত উদাহরণ নেই। সুপ্রিম ইলেকটোরাল কোর্ট এই সিস্টেমের ত্রুটির দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ‘অত্যন্ত ফালতু এ দাবির কোনো ভিত্তি নেই।’
তরুণদের পছন্দে কে এগিয়ে : প্রার্থীদের নির্বাচনি জরিপ বলছে ব্রাজিলের সবচেয়ে কম বয়সি ভোটাররা ৭৬ বছর বয়সি লুলার পক্ষেই বাজি ধরেছেন। শনিবার রিও ডি জেনিরোর একটি সাম্বা বারে নির্বাচনি বিতর্কে গরম করে ফেলেছেন চায়ের টেবিল।
২২ বছর বয়সি আইনের ছাত্র লেটিজিয়া করভেলো এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা লুলার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি।’ তিনি দাবি করেছেন কম বয়সিদের ভোটেই ১২ বছর পর ক্ষমতায় ফিরছেন লুলা। এই প্রার্থীর জন্য আশার কথা হচ্ছে ইতোমধ্যে ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সি ২১ লাখ তরুণ ভোটার হয়েছে ব্রাজিলে।
দেশটিতে এই বয়সি ব্রাজিলিয়ানদের ভোটে অংশ নেওয়া ঐচ্ছিক, আর ১৮ বছর বয়স পেরোলেই সেটা বাধ্যতামূলক। গেটুলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মার্কো আন্তোনিও টেক্সেইরা বলেন, ২০২২ সালের যুব নিবন্ধন ব্রাজিলের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
আর এটাই বলসোনারোর জন্য ‘কাল’ হয়েছে। জরিপ বলছে, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সি ৫২ শতাংশ ভোটার লুলাকে বেছে নিচ্ছেন-যেখানে বলসোনারোর জন্য রয়েছেন ৩২ শতাংশ তরুণ ভোটার।
যোগ্য প্রার্থী কে : এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন চারজন। এদের মধ্যে রয়েছেন-লিবারেল পার্টির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো, সাবেক প্রেসিডেন্ট ওয়ার্কার্স পার্টির সিলভা লুলা দা সিলভা, ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টির সিরো গোমেজ, ব্রাজিলিয়ান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের সাইমোন তিব্বত। নির্বাচনি জরিপে প্রথম দুজন ছাড়া কেউই দুই অঙ্কের সমর্থন অর্জন করেননি।
এদের মধ্যে লুলা দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সামরিক শাসনবিরোধী এই জননেতা ক্ষমতায় ছিলেন ২০০৩-২০০৬ এবং ২০০৭-২০১১ মেয়াদে। ১৯৮০ সালে তিনি ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
অচিরেই দলটি ব্রাজিলের প্রধান বামপন্থি রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। দুই মেয়াদের সরকারে থাকাকালীন লুলা দেশের দারিদ্র্য দূর এবং ধনী-গরিব বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে কাজ করে প্রশংসিত হয়েছিলেন।
এবারের প্রচারণায়ও তিনি নতুন কর ব্যবস্থার মাধ্যমে উঁচু-নিচু জনসাধারণের মধ্যে সমন্বয়ে কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্য দিকে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই লুলা সরকারের নীতির উলটোসে াতে নামেন বলসোনারো।
বন উজাড় করে কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী এই ‘বনখেকো’ চলতি নির্বাচনেও এ কাজে উৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন ভোটারদের। ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে ২৭ বছর ফেডারেল ডেপুটি ছিলেন তিনি। ২০১০ দশকের মাঝামাঝি আমূল ডানপন্থি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হিসাবে আবির্ভূত হন বলসোনারো।
এবারের নির্বাচনে তার বন উজাড়ের রেকর্ড, আদিবাসীদের নির্যাতন-নিষ্পেষণ অধিকাংশ ভোট হারানোর কারণ হতে পারে। শুধু তাই নয়, প্রচারণায় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, খনন বৃদ্ধি করবেন এবং পাবলিক কোম্পানিগুলোকে বেসরকারি করবেন। এতেও অনেক ভোটার হারাতে পারেন বলসোনার।