‘আর সময় নেই, সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন’

নিউজ ডেস্ক:: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দাবি একটাই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা আমাদের স্বাধীনতার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষাকে কেড়ে নিয়েছে, আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে। রুটি-রুজি বন্ধ করে দিয়েছে, কৃষক-খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের পেটের ভাত কেড়ে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের মানুষের মন থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন। আর সময় নেই, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দাবি আদায়ে রাজপথেই ফয়সালা হবে।’

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জোড়া পুকুরপাড় খেলার মাঠের পাশের সড়কে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা থানার উদ্যোগে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় বিএনপি মহাসচিব নিজেই স্লোগান ধরেন- ‘দাবি এক দফা এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘ফয়সালা হবে কোন পথে, রাজপথে রাজপথে’ ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’।

‘জ্বালানি তেলের নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, গণপরিবহণে ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জে শাওন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে’ এই সমাবেশ হয়।

দুপুর ১টা থেকেই সমাবেশস্থলে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। বিকাল তিনটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এদিনও অধিকাংশ নেতাকর্মীকে বাঁশের লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা লাগিয়ে মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নিতে দেখা যায়।

এ প্রসঙ্গে কয়েকজন নেতাকর্মীরা জানান, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা হচ্ছে। তারা তো রাস্তা অবরোধ করছেন না, গাড়ি ভাঙচুর করছেন না। এরপরও দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হচ্ছে। তাই আত্মরক্ষার জন্য লাঠি নিয়ে সমাবেশে এসেছেন’।

এদিকে বিএনপির এ সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। তবে এদিন সমাবেশের আশেপাশেও আওয়ামী লীগ কিংবা তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কোনো মিছিল দেখা যায়নি। যে এলাকায় বিএনপির সমাবেশ ছিল তা ঢাকা দক্ষিণ সিটির এক নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জানান, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির সমাবেশস্থলের আশপাশে না যেতে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের বলা হয়েছে, বিএনপির অনুষ্ঠানে কোনো বাধা দেওয়া যাবে না। তাদের সমাবেশ করতে দিতে হবে। আশপাশের এলাকায়ও অবস্থান নেওয়া যাবে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রত্যাহার করতে হবে। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে সরকার গঠন হবে।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এরা (সরকার) ধরা পড়ে গেছে। দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৭০ বছর ইংল্যান্ডের রানি ছিলেন। এ সময় কত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি। লাখ লাখ মানুষ তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) যখন ইংল্যান্ডে গেছেন, তখন বিবিসি- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করেছে, ঢাকায় রানির প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আপনাকে বলেছে বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য আপনি কী পরিবেশ তৈরি করছেন? বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করার জায়গা দিচ্ছেন? তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচন নাকি সবচেয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়।

এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাকে বলা হয় পাকিস্তানের দালাল। পাকিস্তান আমলে চালের কেজি, আজকে চালের দামের মধ্যে কত পার্থক্য? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম তারা আমাদের শোষণ করেছিল। আমরা লড়াই করে, সংগ্রাম করে এই দেশ স্বাধীন করেছি। এই আওয়ামী লীগ সেই অবস্থায় ফেলেছে। এরা মেগা প্রজেক্ট করে মেগা দুর্নীতি করছে, বিদেশে পাচার করছে, ঘরবাড়ি করছে। আর আমাদের মানুষকে তারা হত্যা করছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সভা-সমাবেশে প্রশাসন অনুমতি দিতে গড়িমসি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই দেশ কারো বাবার রাজত্ব নয়। এই দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আমি তাদেরকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই সরকারই শেষ সরকার নয়। এরপরও সরকার কিন্তু থাকবে।আপনাদের ছবিও প্রিন্ট করা আছে, ভিডিও করা আছে, রেকর্ড করা আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি এই কয়েকদিনে আমার কর্মীদের যে অটুট মনোবল দেখেছি ভালো লেগেছে। আমরা জানি, এখন থেকে যদি আমাদের ওপরে কখনো আক্রমণ হয়, আমাদের কর্মী প্রত্যাঘাত করতে প্রস্তুত রয়েছে। আমরা এখন থেকে হামলা হলে প্রতিরোধ করব। আমরা এই এলাকা থেকে সন্ত্রাস অপসারণের আন্দোলন শুরু করব- এই হোক আজকের শপথ।’

মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, ইশরাক হোসেন, হাবিবুর রশিদ হাবিব, মোশাররফ হোসেন খোকন, লিটন মাহমুদ, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজীব আহসান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদারসহ মহানগরের নেতারা।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *