পরশ-তাপসকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক:: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে নিহত শেখ ফজলুল হক মনি ও তার স্ত্রী আরজু মনি হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মনি-আরজু দম্পতির দুই ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস তখন অনুষ্ঠানে উপস্থিত।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাঁচ বছরের পরশ, তিন বছরের তাপস। বাবা-মায়ের লাশ পড়ে আছে। দুটি বাচ্চা বাবা-মায়ের লাশের কাছে গিয়ে চিৎকার করছে। বাবা ওঠো, বাবা ওঠো..। মা ওঠো, মা ওঠো…। সেদিন কেউ সাড়া দেয়নি।’

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই স্মৃতিচারণ করেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে এখানে পরশ ও তাপস বসে আছে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর চোখ যায় শেখ পরশের দিকে। তাপস মঞ্চে থাকলেও পরশ ছিলেন নিচে প্রথম সারিতে বসা। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরশ সামনে চুপ করে বসে আছে। পরশ আসো, আস কাছে আসো। ওকে নিয়ে আসো..।’পরশ আসলে শেখ তাপসও এগিয়ে গিয়ে ভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করেন। এ সময় দুই ভাই ও প্রধানমন্ত্রীর কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার তখন চোখে পানি।

একপর্যায়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে ওরা বড় হয়ে গেছে…।’

পরে পরশ মঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রীর পা ছুয়ে সালাম করেন।

পরশ বর্তমানে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। আর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র।

পরে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হত্যা করেছে তাদের আপনজন, বিচারের আওতায় আসা যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান ও যারা নানা অপরাধ করে বাংলাদেশে থেকে পালিয়েছে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে জানিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার এবং বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালিকে তিনি (বঙ্গবন্ধু) গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। তাকে যখন বিশ্ব নেতারা সতর্ক করেছেন মিসেস গান্ধি নিজে বলেছিলেন যে কিছু একটা ঘটছে আপনি সতর্ক হন। তার জবাব ছিল না,এরা তো আমার সন্তানের মতো। এরা আমাকে কেন মারবে?’

কোনো বাঙালি তাকে মারতে পারে এটা জাতির পিতা কোনোদিন বিশ্বাসই করেননি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আর বিশ্বাসঘাতকরা আজ দলে বলে ফুলে ফেঁপে উঠে বড় বড় কথা বলছে।’

যেসব দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা মানবাধিকারের  কথা শোনায় আমাদেরকে। মানবাধিকার নিয়ে তত্ত্বজ্ঞান দেয়। কিন্তু আমার কাছে যখন এই কথা বলে বা দোষারোপ করে তারা কি একবারও ভেবে দেখে যে আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল যখন আমরা আপনজন হারিয়েছি? স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে কেঁদে বেড়িয়েছি।’

ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফীর সভাপতিত্বে আলোচনা সঞ্চালনা করেন ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাদেক খান, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল, সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এমএ কাদের খান, দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত প্রমুখ।

শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্যদিয়ে আলোচনা সভা শুরু হয়।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *