অবশেষে তোপের মুখে পুতিনের ‘গোপন প্রেমিকা’, বাদ গেলেন না সাবেক স্ত্রীও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: এবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কথিত প্রেমিকা আলিনা কাবায়েভা ও তার সাবেক স্ত্রী লিউডমিলা ওচেরেটনায়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, ‘পুতিনের আর্থিক নেটওয়ার্ককে টার্গেট করা, রুশ প্রেসিডেন্ট এবং তার ঘনিষ্ঠদের ওপর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়াই’ এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য।

এ ব্যাপারে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেন, আমরা পুতিনের বিলাসবহুল জীবনযাপনকে  লক্ষ্যবস্তু করছি… আমরা ইউক্রেন জয় না হওয়া পর্যন্ত পুতিনের আগ্রাসনে সহায়তাকারী এবং সমর্থনকারী সবার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকব।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, কাবায়েভা ‘কথিত বৃহত্তম বেসরকারি রাশিয়ান মিডিয়া কোম্পানি ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের বোর্ডের চেয়ার হয়ে উঠেছেন’ এবং ‘আগে তিনি পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়ার ডুমাতে ডেপুটি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

অন্যদিকে ২০১৪ সালে পুতিনের সঙ্গে ডিভোর্স হয় ওচেরেটনায়ার। তাকেও যুক্তরাজ্যের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থার সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক ব্যবসায়িক সম্পর্ক থেকে উপকৃত হয়েছেন’ বলে ব্রিটিশ সরকার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর এই নিয়ে যুক্তরাজ্য এক হাজারেও বেশি রাশিয়ান ও শতাধিক রুশ সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বলে ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

পুতিন ইউক্রেনে আগ্রাসনের ঘোষণা দেওয়ার পর পুতিনের ঘনিষ্ঠদের ওপর একে একে নিষেধাজ্ঞার তোপ এসে পড়লেও বাদ ছিলেন আলিনা কাবায়েভা। কেন তার ওপর পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা দেয়নি তা নিয়ে শুরু হয় কানাঘুষা।

৬৯ বছর বয়সী পুতিন অবশ্য কখনোই আলিনার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি। তবে মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা ৩৮ বছর বয়সী আলিয়া পুতিনের অন্তত তিনটি সন্তানের মা। দ্য গার্ডিয়ানের মতো বেশকিছু গণমাধ্যমও তাকে পুতিনের প্রেমিকা হিসেবেই দাবি করে থাকে। এমনকি কয়েকটি রাশিয়ার গণমাধ্যমও আলিনাকে দেশটির ‘সিক্রেট ফার্স্ট লেডি’ বলে অভিহিত করে।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তদন্তে জানা গেছে, আলিনা পুতিনের প্রভাব এবং ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে লাভবান হয়েছেন।  সেই সম্পদের কিছু অংশ বিদেশে লুকিয়ে রেখেছেন বলে মার্কিন কর্মকর্তারা সন্দেহ করেছেন।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পরপরই, ফেব্রুয়ারি মাসে  পুতিনের ওপর বাইডেন প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সাতটি দেশ পুতিনের প্রাপ্তবয়স্ক দুই মেয়ে মারিয়া পুতিনা এবং ক্যাটরিনা তিকহোনোভার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

তবে এসব নিষেধাজ্ঞার খড়গ অবশ্য পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্কের কানাঘুষার পরও স্বর্ণপদক বিজয়ী জিমন্যাস্ট আলিনার ওপর পড়েনি।

২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো পুতিনের সঙ্গে আলিনার নাম জড়ায়। মিডিয়া টাইকুন এবং সাবেক কেজিবি স্পাই আলেকজান্ডার লেবেদেভের মস্কো থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র  এ দাবি করেছে। ২০১৩ সালে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন তার স্ত্রী লিউডমিলাকে ডির্ভোস দেন।

এরপর আলিনাকে ‘রাশিয়ার ফার্স্ট লেডি’ বলা শুরু হয়। অবশ্য আলিনা পুতিনের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে অস্বীকার করেন। তবে থেমে থাকেনি তাদের সম্পর্কের গুঞ্জন। গুজব রটে তারা গোপনে বাগদান করেছিলেন এবং তারপর বিয়ে করেন। বিয়েতে পারিবারিক অনুষ্ঠানও হয়েছিল।

কাবায়েভা একজন পার্লামেন্টের ক্রেমলিনপন্থি সদস্য ছিলেন এবং ২০১৪ সালে ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপ চালানোর জন্য বার্ষিক ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেতনে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাকে জনসমক্ষে খুব কমই দেখা যায়। গত বছরের ডিসেম্বরে মস্কোতে ডিভাইন গ্রেস রিদমিক জিমন্যাস্টিকস টুর্নামেন্টে তিনি শেষবার ক্যামেরা বন্দি হয়েছিলেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *