সুপ্রিম কোর্ট বারে উত্তেজনা, আ.লীগ-বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হাতাহাতি

 সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক::   সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে ফলাফল নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপিপন্থী দুই আইনজীবী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। আহত আইনজীবীরা হলেন, অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা ও অ্যাডভোকেট আয়েশা খাতুন। আয়েশা খাতুনকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, আর মাসুদ রানা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৫ হাজার ৯৮২ জন আইনজীবী ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।  ১৮ মার্চ বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত চলে ভোট গণনা।

গণনা শেষে দেখা যায়, সভাপতিসহ ৬টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল ও সম্পাদকসহ ৮টি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল বিজয়ের পথে। সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে অল্প ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার প্রস্তুতি নিলে সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার দাবি তোলেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা।

নির্বাচন কমিশনের প্রধান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এওয়াই মশিউজ্জামান অভিযোগ নাকচ করে ফলাফল ঘোষণা করতে অনড় থাকলে মিছিল, শ্লোগান, হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সম্পাদক প্রার্থী আব্দুন নূর দুলাল লিখিতভাবে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন করেন। আবেদন গ্রহণ না করলে নির্বাচন কমিশনের প্রধান এওয়াই মশিউজ্জামানকে পদত্যাগ করতে বলেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। তার পদত্যাগের দাবিতে শ্লোগান দেওয়া হয়।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত কমিটির প্রধান এওয়াই মশিউজ্জামান সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন নেন ও ভোটের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করেন। ওই সময় তিনি জানান, শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকাল ৩টায় দুই সম্পাদক প্রার্থীর উপস্থিতিতে ভোট পুনরায় গণনা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু শুক্রবার এওয়াই মশিউজ্জামান সুপ্রিম কোর্ট বারে আসেননি। এ কারণে ভোট পুনঃগণনার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত কমিটির প্রধানের পদ থেকে মশিউজ্জামান পদত্যাগ করেন।

জানা গেছে, গত বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা ফলাফল নিয়ে জটিলতা নিরসনে করণীয় ঠিক করতে বৈঠক করেন। সেখানে নির্বাচনের ভোট গণনার সময় উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে পদত্যাগ করা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এওয়াই মশিউজ্জামানকে ফলাফল ঘোষণার অনুরোধ করা হয়। এতে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

এ অবস্থায় বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয় বুধবার। এর আগেই মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট বারের নবনির্বাচিত নেতাদের কক্ষে নেমপ্লেট লাগানো হয়। এ খবরে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা বুধবার দুপুরে এর প্রতিবোদে বার ভবনে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের কক্ষের সামনে লাগানো নেমপ্লেট সরাতে যান। এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে দুই আইনজীবী আহত হন বলে প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান।

আহত মাসুদ রানা তার ফেসবুক পেজে হাতে বেন্ডেজ অবস্থায় ছবি পোস্ট করেছেন। তিনি অভিযোগ করে  বলেন, ‘একজন নারী আইনজীবী হাতুড়ি দিয়ে তার হাতে আঘাত করেছেন। ছবিতে আইনজীবী আয়েশাকে মাটিতে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট পুনঃগণনার দাবি জানিয়ে আসছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। এর সমাধান না করেই বিএনপির আইনজীবীরা সম্পাদকের কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষে নেমপ্লেট লাগিয়েছেন। সাধারণ আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সেটি খুলতে চেয়েছিলেন। এ সময় ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। কেউ আহত হয়নি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *