ভুল করিনি, শনাক্ত করলেন কীভাবে: গোয়েন্দাদের শুটার মাসুম

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক:: রাজধানীর মতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করা হয় গত ২৪ মার্চ দিবাগত রাতে। এ হত্যাকাণ্ডের পর শুটারকে হন্য হয়ে খুঁজছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শুটারের দৈহিক গঠন সম্পর্কে ধারণা নেন গোয়েন্দারা। এরপর ঢাকার ৭-৮ শুটারের দেহের গড়ন বিশ্লেষণ করেন। তার মধ্যে দুজনের গড়ন মিলে যায়। তখন তাদের সম্ভাব্য গতিবিধি ও স্বজনদের নজরদারিতে রাখা শুরু করে ডিবি। শরীরের গঠন মিলে যাওয়া একজন রওনা হন খুলনার দিকে এবং অপরজন জয়পুরহাটের দিকে। খুলনায় যিনি যান তিনি সেখানে ৬-৭ ঘণ্টা অবস্থান করেন।

অন্যদিকে জয়পুরহাটে যাওয়া ব্যক্তি ১০ মিনিটের মতো থেকেই বগুড়ার দিকে রওনা হন। ফলে বগুড়ার দিকে যাওয়া ব্যক্তিকে ঘিরেই সন্দেহ প্রবল হতে থাকে। বগুড়ার দিকে রওনা হওয়া ব্যক্তিকে গাড়িতে যিনি নিয়ে যান তার মোবাইল ফোন নম্বরের ছয় মাসের সিডিআর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ সময়ে মাত্র এক-দুইটা কল করা হয়েছে ওই নম্বর থেকে। সেই নম্বরগুলোও আনা হয় নজরদারিতে। এর মধ্যে একটি নম্বরে কল আসে। অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘ও.. কই?’ উত্তরে বলা হয়, ‘ও নাই এখানে।’ ১০ মিনিট পর আবার নম্বরটিতে কল আসে। বলা হয়, ‘দিনা (মাসুমের স্ত্রী) বার বার কল দিচ্ছে।’ উত্তরে বলা হয়, ‘কেন?’। তখন অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি বলে, ‘ঘটনা মনে হয় আঁচ করতে পেরেছে।’ ২০ মিনিট পর ফের কল আসে ওই নম্বরে। বলা হয়, ‘বাসায় যা। ওরে (দিনা) ২৫ হাজার টাকা দিয়ে আয়।’ এরইমধ্যে যাকে টাকা দিতে বলা হয় তাকে ধরে ফেলে ডিবি। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দিনার বাসার ঠিকানা চাওয়া হয়। তিনি শুধু দিনার সন্তানের নাম ‘মাহিরা’ এটুকু জানতেন। পরে এ নামের সূত্র ধরে মাসুমের বাসা খুঁজে বের করা হয়। ধরা হয় দিনাকে।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ে পড়াশোনা করা দিনা জানান, মাসুমের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো নয়। শুক্রবার সন্ধ্যার পর মাসুম তাকে ফোন করে বলেছিল, ‘কয়েকদিন পর বাসায় আসব’। এতে গোয়েন্দাদের সন্দেহ বাড়লে দিনার থেকে মাসুমের ছবি নেওয়া হয়। সেই ছবি মিলে যায় টিপুর শুটারের দেহের গঠনের সঙ্গে। এরইমধ্যে মাসুমকে যিনি ঢাকা থেকে জয়পুরহাট দিয়ে এসেছিলেন তিনি ঢাকায় ফেরেন। তাকেও আটক করা হয়। এরপর ডিবির একটি টিম তাকে নিয়ে বগুড়ার পথে রওনা হন। গ্রেফতার হন মাসুম। তখন তিনি ঘুমে ছিলেন। ডিবি কর্মকর্তাদের দেখে শুধু জিজ্ঞেস করেন, ‘আমি তো কোনো ভুল করিনি, শনাক্ত করলেন কীভাবে?’

গত ২৪ মার্চ রাতে নিজস্ব মাইক্রোবাসে বাসায় ফেরার সময় শাজাহানপুরে ব্যস্ততম রাস্তায় আওয়ামী লীগ নেতা টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় ঘাতকের তপ্ত বুলেটে নিভে যায় পথচারী রিকশারোহী বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতির জীবনপ্রদীপ। গুলিতে আহত হন মাইক্রোবাসচালক মনির। তবে মাইক্রোবাসের পেছনের সিটে বসা টিপুর দুই বন্ধু আবুল কালাম ও মিজানুর রহমান মিরাজ অক্ষত অবস্থায় প্রাণে বেঁচে যান। এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ব্যস্ত রাস্তায় অস্ত্র উঁচিয়ে টিপুকে এলোপাতাড়ি গুলি করা ভাড়াটে শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, এলাকায় প্রভাব বিস্তারকারী নেতাদের পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডেও শুরু হয় মাসুমের পদচারণা। নিজের ক্ষমতা জানান দিতে বিভিন্ন স্থানে গুলি ও কিলিং মিশন পরিচালনায় আন্ডারওয়ার্ল্ডে পরিচিতি বাড়তে থাকে তার। একসময়ে ভাড়াটে কিলার হিসাবে কাজ শুরু করেন। হাত মেলান বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশের সহযোগী মুসার সঙ্গে। তার নির্দেশেই বৃহস্পতিবার রাতে ফিল্মি স্টাইলে মতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে ব্যস্ততম সড়কে গুলি করে হত্যা করেন। এ কিলিং মিশন বাস্তবায়নে সময় নেন এক থেকে দেড় মিনিট।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *