ঢাবির বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রলীগের নির্যাতন আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক:: রহমান হলের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়া, সিনিয়রদের কথা না শোনাসহ ঠুনকো নানা অভিযোগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নিয়মিত চলছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। আর এসব নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশই বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তর অনুসারী বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। আর এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি হন মেহেদী হাসান শান্ত, সাধারণ সম্পাদক হন মাহবুবুর রহমান। নতুন কমিটি ঘোষণার পরই আবাসিক হলের চিত্র বদলে যায়। ঠুনকো অভিযোগে শিক্ষার্থীদের ওপর শুরু হয় নির্যাতন। মার্চ মাসে এখন পর্যন্ত তিনটি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

এসব নির্যাতনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ৩ মার্চ গেস্ট রুমে হলের বড় ভাইদের নাম বলতে না পারায় মীর সাদ নামে হলের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর ১০ মার্চ ক্যাম্পাসে ধূমপান করার শাস্তিস্বরূপ ‘মিনি গেস্টরুমে’ (হলের কোনো কক্ষে ডেকে নির্যাতন করা হলে তাকে শিক্ষার্থীরা মিনি গেস্টরুম নির্যাতন বলেন) অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু তালিবকে ধোঁয়া না ছেড়ে সিগারেট খেতে বাধ্য করা হয় এবং খেতে না চাইলে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটায় তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী। একই দিন ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা ও সিনিয়রের রুমে সিটে পা তুলে বসাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহিদুল ইসলাম মুকুলকে ছুরি দিয়ে জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হয়। এছাড়াও গত ৮ মার্চ প্রোগ্রামে উপস্থিত না থাকার অভিযোগে দ্বিতীয় বর্ষের ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের রুমে ৩০১ (ক) তালা দিয়ে রাখা হয়। ফলে ওই কক্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন হলে ঘুরে ঘুরে রাত কাটাচ্ছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মেহেদী হাসান শান্ত হলের সভাপতি হওয়ার পর ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল বাদে অন্য এলাকার শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। তবে আবাসিক হলের সিট হারানোর ভয়ে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন এসব শিক্ষার্থীরা।

এদিকে নির্যাতনের এসব ঘটনায় জড়িত অধিকাংশ নির্যাতনকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মেহেদী হাসান শান্ত বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অভিযোগের বিষয়ে মেহেদী হাসান শান্ত  বলেন, আমাদের হলে কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। একটা পক্ষ আমাদের হলের পরিবেশকে উত্তপ্ত করার জন্য এসব মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানোর চেষ্টা করছে।

টার্গেট করে বিশেষ এলাকার শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করার বিষয়ে শান্ত বলেন, আমি হল সভাপতি হওয়ার আগেই আমার সঙ্গে সাতটি এলাকার মানুষ রাজনীতি করত। সেখানে বিশেষ এলাকাকে টার্গেট করার তো প্রশ্নই আসে না।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো.আকরাম হোসেন শুক্রবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের গেস্টরুমে একটা সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এখানে আমরা কোনো ধরনের নির্যাতনের ঘটনা দেখিনি। আমরা চেষ্টা করতেছি কোনো প্রমাণ পাই কি না। যাদের ব্যাপারে অভিযোগ এসেছে আমরা বিষয়গুলো আরও ভালো করে দেখব।

তিনি বলেন, গেস্টরুমের ফুটেজ সবসময়ই আমরা পরিদর্শন করি। আমরা দেখি দু-চারজন শিক্ষার্থী প্রায় ওখানে বসে গল্প করে। এ ছাড়া আর কিছুই হয় না। এ সময় একজন হাউজ টিউটর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মোহাম্মদ রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, হলে কী হচ্ছে না হচ্ছে ২৪ ঘণ্টাই কি আমরা এগুলো দেখব নাকি? আমাদের তো ক্লাশ রয়েছে, পরিবার রয়েছে!

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *