স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে পথ চলেছি: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক:: অধিগ্রহণ করা জমির টাকা মানুষ যাতে দ্রুত পায় সেজন্য অর্থছাড় প্রক্রিয়া সহজ ও ক্ষিপ্র করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, এক্ষেত্রে জটিলতা কমাতে হবে। কোথাও জমি অধিগ্রহণের চিন্তা করা হলে আগেই সেখানকার ছবি তুলে রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বলেন, গোপনে ছবি তুলে রাখার কারণ হলো, যাতে পরে অধিগ্রহণের খবর শুনে মানুষ বাড়িঘর কিংবা গাছপালা লাগাতে না পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো অবকাঠামো বা রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বৈদ্যুতিক খুঁটি বা অন্য ইউটিলিটি সার্ভিস সরাতে আলাদা প্রকল্পের প্রয়োজন নেই। কেননা দেখা যাবে এই প্রকল্প দেখভাল করতেই আবার প্রকল্প নিতে হচ্ছে।

বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এমন নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

এদিকে বাসসের খবরে বলা হয়েছে, গণভবন থেকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রারম্ভিক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের জনগণকে সুন্দর ও উন্নত জীবন প্রদানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে একটা লক্ষ্য স্থির করেই পথ চলেছি, যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন সেটা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে, করতেই হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনে আর্থ-সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করা, তাদের জীবনকে উন্নত করা, জীবন যেন সুন্দর হয়, সম্মানজনক হয়, বিশ্বের বুকে বাঙালি যাতে মাথা উঁচু করে চলতে পারে এটাই একমাত্র লক্ষ্য। আর এটাই জাতির পিতা সব সময় চাইতেন, বলতেন। সে স্বপ্নটা অধরা থাক তা আমি চাই না।

তিনি বলেন, তার সরকারের ১৩ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে এবং আরও সামনে এগিয়ে গিয়ে একদিন আমরা উন্নত দেশে পরিণত হব। সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশকে এখন আর কেউ করুণার চোখে দেখে না, সম্মানের চোখে দেখে। অন্তত এটুকু পরিবর্তন আমরা গত ১৩ বছরে করতে সক্ষম হয়েছি।

২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা আরএডিপি অনুমোদন
এনইসি বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি)। মূল এডিপি থেকে এ অর্থ কমে যাওয়ায় আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। শুরুতে ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। সার্বিক বরাদ্দ কমছে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আরএডিপিতে খাত ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে। প্রকল্পভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।

পরে ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব প্রদতীপ রঞ্জন চক্রবর্তীসহ অন্য সদস্যরা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এনইসি বৈঠকে আমরা আর্থিক ৬টি খাতের শক্তিশালী অবস্থান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। এগুলো হলো, জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭ শতাংশের মতো অর্জিত হয়েছে। এছাড়া কৃষি খাতের চমৎকার অর্জন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সাফল্য। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি একটু বাড়লেও তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। কেননা আমেরিকা ও ভারতসহ বিশ্বের বড় অনেক অর্থনীতির দেশের তুলনায় আমাদের মূল্যস্ফীতি এখনো কম।

রাশিয়া ও ইউক্রেন আমাদের বন্ধু, রূপপুরে প্রভাব পড়বে না
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা যুদ্ধের পক্ষে নই, শান্তির পক্ষে। রাশিয়া ও ইউক্রেন দুটিই আমাদের বন্ধু। রাশিয়া মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অনেক সহায়তা করেছে। তা না হলে ৩০ লাখের পরিবর্তে হয়তো ৬০ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হতো। ইউক্রেন যুদ্ধ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কোনো প্রভাব পড়বে না। এটা হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে। এছাড়া করোনা মহামারির মতো যুদ্ধেও রাশিয়া প্লেন ভাড়া করে লোকবল ও যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে হিট থাকলে তাপ কিছুটা আসবেই। দেখতে হবে আমাদের চামড়া বা লোম কতটা পুড়ে যায়। বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার কম নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে আইএমইডি সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের নানা শর্ত থাকে। এর চেয়ে বড় কথা হচ্ছে পরামর্শক ও যন্ত্রপাতি আনতে হয় বিদেশ থেকে। করোনায় সেসব বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। এজন্য এত টাকা কমাতে হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সংশোধিত এডিপিতে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ আছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে বৈদেশিক সহায়তা অংশে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে মোট বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ ছিল ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা। অনুমোদন পাওয়া সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৭৫৪টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৫০৭টি, কারিগরি ১৪০টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ১০৭টি। মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল প্রায় দেড় হাজার। সংশোধিত এডিপিতে মোট প্রকল্পের মধ্যে নতুন অনুমোদিত ১৯৯টি। এছাড়া চলমান অর্থবছরের মূল এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত নেই এমন বাদ পড়া ২১টি প্রকল্প বরাদ্দসহ আরএডিপিতে রাখা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাত হচ্ছে- পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি ৩৬ টাকা, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৯ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা, এছাড়া শিক্ষা খাতে ২০ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৫ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ৯ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৪ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা এবং জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে ৩ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

এছাড়া সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি প্রকল্প হচ্ছে- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাদ্দ হচ্ছে ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৬ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। এছাড়া পর্যায়ক্রমে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে ৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্পে ৪ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে ৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। সাসেক রোড সংযোগ প্রকল্প এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়তকরণ প্রকল্পে ২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এছাড়া সাপোর্ট টু ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়ক প্রকল্পে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *