‘পা দিয়ে গলা চেপে সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করেন ওসি প্রদীপ’

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক:: সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বাদী সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসিকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। এ ছাড়া আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সিনহার সঙ্গী ও মামলার দুই নম্বর সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। এদিন এই দুজনের জবানিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সিনহার হত্যার লোমহর্ষণ বর্ণনা আদালতের সামনে তুলে ধরেন সিফাত।

সিফাত বলেন, লিয়াকত আলী গুলি করেছিলেন সিনহা মোহাম্মাদ রাশেদ খানকে।  গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছিলেন। এ সময় টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে গিয়ে পা দিয়ে সিনহার গলায় চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।  সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দেশের আলোচিত এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়।  আজ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে।

কক্সবাজার আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, এ মামলায় ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।  প্রথম দুদিনে সিনহার বোন ও সিফাত সাক্ষ্য দিয়েছেন।  অন্যরা পর্যাক্রমে সাক্ষ্য দেবেন।  সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ মামলার ১৫ আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস আদালতকে বলেন, ‘লিয়াকত ফোনে বলেছে— ‘টার্গেট ফেলে দিয়েছি, তোরা তাড়াতাড়ি আয়।’ আরেক ফোনে তিনি বলেন, ‘স্যার একটাকে ডাউন করেছি, আরেকটারে ধরে ফেলেছি।’ সিনহা পানি ও শ্বাস নিতে চাইলে লিয়াকত গালাগাল করে কোমরে লাথি মেরে ফেলে দেন এবং মাথা চেপে ধরেন।  এর পর পুলিশ এলে লিয়াকত নির্দেশ দেন আশপাশের মানুষকে ভয় দেখাতে, যাতে কেউ সিনহাকে সাহায্য করতে না পারে, ছবি বা ভিডিও করতে না পারে।

সাক্ষ্যে তিনি আরও বলেন, কিছুক্ষণ পর প্রদীপ আসে, কাকে যেন ফোন করে, লিয়াকতের সঙ্গে কথা বলেন, সিনহার দিকে এগিয়ে যান, তার বাম পাঁজরে সজোরে লাথি মারেন।  এর পর তিনি জুতা দিয়ে বাম গলায় চাপ দেন, তখন সিনহা নাড়াচাড়া করে ও কাঁপতে থাকে।  একপর্যায়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে প্রদীপ গলা থেকে পা সরিয়ে নেন।  এ সময় রুবেল সাগরকে বলেন, গাড়ি থেকে ইয়াবা, গাঁজা নিয়ে আসতে হবে।  রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার সিনহাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে আসামিরা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দুটি মিথ্যা মামলা করে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন।  প্রদীপের প্ররোচনায় ও ফোনে নির্দেশিত হয়ে লিয়াকত সিনহাকে গুলি করেন।

বাদী বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ জেনে আমি মামলা করেছি। তিনি আরও বলেন, ‘সিনহা হত্যার বিচারের রায়ের দিকে সারা বাংলার মানুষ তাকিয়ে আছে। আমি ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন শারমিন শাহরিয়ার। এ সময় আদালত তাকে শান্ত হয়ে বসতে বলেন।  শারমিন শাহরিয়ারের সাক্ষ্যগ্রহণের পর শুরু হয় জেরা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরায় সিনহা স্বেচ্ছায় না বাধ্যতামূলক অবসরে গেছেন, ইউটিউব চ্যানেলের বিষয়সহ বিভিন্ন প্রশ্ন করেন তাকে।  জেরার সময় আইনজীবীদের প্রশ্নের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আদালত এবং সতর্কভাবে প্রশ্ন করার আহ্বান জানান। বাহাদুরি দেখানোর জন্য যেনতেন প্রশ্ন না করার অনুরোধ জানান।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টের গাড়ি তল্লাশি কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হন। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব ১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *