জাতীয় পুরস্কার পেলেন হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের এসএসপি রবিউল

তৃণমূলের কল্যাণে পুলিশী সেবা পৌঁছে দেওয়ায় হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ২০১৯-২০২০ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছেন মোঃ রবিউল ইসলাম পিপিএম সেবা। শুক্রবার হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার অফিস থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা গেছে, তৃণমূল পর্যায়ে পুলিশী সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, মাঠ পর্যায়ে শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলামকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ মার্চ অত্র সার্কেলে যোগদানের পর থেকে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশী সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালনের বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, আমাকে শুদ্ধাচার পুরস্কারের জন্য মনোনীত করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মাননীয় আইজিপি মহোদয়, সাবেক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা স্যার এবং হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের সকল সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। একই সাথে এই পুরস্কারের সম্মান ধরে রেখে যেন আগামীতেও ভাল কাজ করে যেতে পারি। এতে সকলের সহযোগীতা চাই।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ মার্চ ন্যায় নিষ্ঠ ও সততার প্রতীক মানবিক এই পুলিশ কর্মকর্তা হবিগঞ্জ জেলা হতে বদলি হয়ে কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, ফিকল-টেটার রাজ্য হিসেবে খ্যাত জেলা হবিগঞ্জ। দাঙ্গা প্রবণতা অনেকাংশে বেশী। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারি, হানাহানি এবং রক্তারক্তির মত জঘণ্য খেলায় মেতে উঠে সাধারণ জনগণ। বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে তাদের এই বিরোধ। মামলা মোকাদ্দমায় জর্জরিত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হতে হয় অনেক পরিবারকে। কালে বিবর্তনে দাঙ্গার কালো ছায়া যখন হবিগঞ্জবাসীর ঐতিহ্যকে গ্রাস করেছে।

ঠিক সেই মুহুর্তে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অদম্য প্রতিনিধি হয়ে হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের দায়িত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়িত হন মো. রবিউল ইসলাম পিপিএম-সেবা।

সাবেক পুলিশ সুপার মোঃ মোহাম্মদ উল¬্যা বিপিএম-পিপিএম এর সার্বিক নির্দেশনায় ও নেতৃত্বে অদম্য, বিচক্ষণ এবং সততার কিংবদন্তী মোঃ রবিউল ইসলাম পিপিএম-সেবা হবিগঞ্জ সদর সার্কেল যোগদান করে তাঁর আওতাধীন থানা (হবিগঞ্জ সদর মডেল, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ) সমূহের সংঘটিত অপরাধ পর্যালোচনা করেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণ চিহ্নিত করেন। বংশ পরম্পরায় থাকা বিরোধের মূল কারণ উদঘাটনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। থানা এলাকার প্রায় প্রত্যেক গ্রামে প্রায় পাঁচ শতাধিক বিট ও কমিউনিটি পুলিশিং সভা করেন।

দাঙ্গা-হাঙ্গামার কুফল সম্পর্কে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করেন। ফিকল টেটার কাল সংস্কৃতি থেকে হবিগঞ্জবাসীকে বের করার চেষ্টা করেন। হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষদের প্রাপ্ত সেবাটুকু প্রদানের প্রয়াসে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এবং খুব শ্রীঘ্রই তিনি অভিনব এক পদ্ধতি অবলম্বন করেন। মহৎ এই উদ্যোগের নাম ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ কার্যক্রম। দীর্ঘ মেয়াদী বিরোধ কিংবা ছোটখাট যেকোন ঘটনার অভিযোগপ্রাপ্ত হলে বিষয়টি মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত ঠেলে না দিয়ে অত্যন্ত মানবিক বিবেচনায় স্ব-উদ্যোগে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, কমিউনিটি-বিট পুলিশের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যদেরকে নিয়ে বিরোধগুলো সার্কেল অফিস ও থানায় বসে প্রায় ৫ শতাধিক মামলা বিকল্প বিরোধ এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে অত্র সার্কেলাধীন থানা সমূহে পূর্বের তুলনায় (হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা-২২০, লাখাই-১২৪টি, শায়েস্তাগঞ্জ- ১০৫টি) সর্বমোট ৪৪৯টি মামলা হ্রাস পায়। তাঁর মানবিক কর্মকান্ডে দিনে দিনে অসহায় হতদরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছিল হবিগঞ্জ সদর সার্কেল কার্যালয়।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *