দক্ষিণ সুনামগঞ্জে মালিকানা জায়গায় ঘর নির্মাণ করছেন ইউএনও, মানছেন না আদালতের নির্দেশও

“সিলেট সংবাদ সম্মেলনে ভূমি মালিকরাদের অভিযোগ’’

‘দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বশিরপুর মৌজায় মালিকানাধীন জায়গায় উপজেলা প্রশাসন মুজিববর্ষের গৃহ নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জায়গার ১৩৮ জন মালিক। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন বলে তারা জানান। সরকারি জায়গার ঘর নির্মাণে নিষেধ থাকার পরও বেআইনীভাবে চালিয়ে যাওয়া নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি করেছেন এসব ভূমি মালিকরা।

বুধবার সিলেট নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভূমি মালিকদের পক্ষে এসব অভিযোগ করেন ছাতক উপজেলার গণিপুরের রাজা মিয়ার ছেলে আনছার মিয়া।


লিখিত বক্তব্যে তিনি ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে সরকারকে আমরা ঘর নির্মাণের জন্য জায়গা দান করব। কিন্তু আমাদের স্বত্ব স্বীকার করতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ না নিলে আদালত অবমাননার মামলা করার কথাও জানান আনছার মিয়া।বক্তব্যে বলা হয়, গণিপুর গ্রামের পার্শবর্তী দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বশিরপুর মৌজার জেএল নং-২২৬, এসএ খতিয়ান নং-০১ ও ২২ নং দাগে ১৫৬.৯০ একর বোরো, আউশ, আমন ও আংশিক বাড়ি রকম ভূমির মালিক তারা। গৌরি চরণ দাস তালুকের অন্তর্গত কয়েকটি দাগে ১৯৮.১৯ একর ভূমির মালিক ছিলেন তাদের পূর্বসুরি মোহাম্মদ হাতিম গং। এরমধ্যে ২২ নং দাগের ১৫৬.৯০ একর ভূমিতে সরকার ঘর নির্মাণ শুরু করেছে। শতবছর ধরে তা ভোগ দখল করে আসছেন তারা। এসব ভূমি ১৯৫৬ সালের এসএ রেকর্ডে ভুলক্রমে সরকারি খতিয়ানভূক্ত হয়। রেকর্ড সংশোধনের জন্য ১৩৮ জন উত্তরাধীকারের পক্ষে ২০০১ সালে সুনামগঞ্জ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে স্বত্ব মামলা (নং-৫/০১) দায়ের করা হয়। দীর্ঘ সময় পর মামলা করায় ২০০৭ সালে মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত। ফলে একই বছর হাইকোর্টে আপিল (নং-৩৮১/০৭) করা হয়। শুনানী শেষে ২০১৯ সালের ২২ মে আপিলের রায় প্রদান করা হয়। রায়ে উল্লেখ করা হয়, বিবাদী অর্থাৎ জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তার সেই জায়গায় কোনো স্বত্ব নেই ও ছিল না। উচ্চ আদালতের রায়ের পর সরকারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে লীভটু আপিল (নং-১২৪/২১) করা হয়েছে। যার পরবর্তী শুনানী আগামী ডিসেম্বরে হওয়ার কথা রয়েছে।

বক্তব্যে আনছার মিয়া আরও জানান, উচ্চ আদালত তাদের পক্ষে সেই ভূমির অধিকার ও সেখানে বাধা প্রদান না করতে নির্দেশনা দেন। এছাড়া মালিকদের পক্ষে তিনি  ২০২০ সালে সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারি জজ সদর আদালতে ২২ দাগে ঘর নির্মান করা হচ্ছে উল্লেখ করে স্বত্ব মামলা (নং-১১০/২০ করেন। একই আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করলে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বর্ধিত করা হয়।
সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি আদালতের বিচারক আনোয়ারুল কবির বিবাদীদের বিরুদ্ধে মোকাদ্দমা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নালিশা ভূমিতে ভোগ দখলে কোনো প্রকার বাধা ও নির্মাণ কাজ করতে পারবেন না বলে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকের স্মরনাপন্ন হলে তার নির্দেশে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টরেট আব্দুল মান্নান গত ১০ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ সুনামগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিটি দিয়ে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অনুরোধ করেন। কিন্তু তাও আমলে নেওয়া হয়নি।
https://youtu.be/_mwd_7X2YPM

 

আনছার মিয়া জানান, গত বছরের নভেম্বরে ভূমিতে আশ্রায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রায় শতাধিক ঘর তাদের জায়গার উপর বিচ্ছিন্নভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে।

সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছে সেটা সবার জন্য আনন্দের উল্লেখ করে তিনি জানান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৪১২টি ঘর বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে প্রথম ধাপের ১৫১টি ঘর নির্মান চলছে। ইতোমধ্যে ৬২টি ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৮৯টি ঘরের কাজ প্রায় শেষের দিকে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসন থেকে ৫ একর জায়গা তাদের দিতে বলা হয়। কিন্তু এ নিয়ে কোনো সঠিক সীদ্ধান্ত হয়নি। প্রয়োজনে আমরা সরকারকে জায়গা দান করবো। কিন্তু আমাদের স্বত্ব স্বীকার করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ভূমি মালিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-মতছির মিয়া, কাজী লিলু মিয়া, কাজী একলিছ, কাজী মিছলু হোসেন, কাজী মখদ্দুছ মিয়া, কাজী সুরত আলী, সফর আলী প্রমুখ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *