রায়হান হত্যা : রিমান্ডে যেসব তথ্য দিলেন টুআইসি হাসান

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক:: সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যাকান্ডের পর বরখাস্ত হওয়া এস আই আকবরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছিলেন ফাঁড়ির তৎকালীন টুআইসি এস আই হাসান আলী রিমান্ডে থাকাকালিন সময়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কাছে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। ফাঁড়ির সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ গায়েব করার নেতৃত্বদেন হাসান। সেই সাথে ঘটনার অন্যতম আলামত হার্ডডিস্ক পাল্টে ফেলে তারা নির্দেশে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিয়েছে হাসান। তদন্তেও এ বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তে পাওয়া সকল তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এজন্যে অভিযোগপত্র দিতে কিছুটা বিলম্ব হবে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে কি তথ্য পাওয়া গেছে তা বলতে রাজি হননি আইও। এদিকে ঘটনার আগে ও পরে ২৪ ঘণ্টায় হাসান ও কোম্পানীগঞ্জে নোমানের মধ্যে ৫৯ বার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। হাসান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আকবর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও প্রথমে গোপন করেন। রিমান্ডে এ সকল তথ্য দেয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু তথ্য দিলেও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি হয়নি হাসান।

জানা গেছে, রায়হান হত্যার পর ২১ অক্টোবর এসআই হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করে মহানগর পুলিশ। এরপর থেকে তাকে নগর পুলিশ লাইন্সে বিশেষ নজরদারীতে রাখা হয়েছিল। রায়হান হত্যার পর হাসান, আকবরসহ এ পর্যন্ত ৫ পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাসানকে গ্রেফতারের পর মামলাটি নতুন মোড় নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার পর নগরীর জল্লারপারের গ্যালারিয়া শপিং সিটির একটি দোকান থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার ৫০০ গিগাবাইটের হার্ডডিস্ক কিনে এনে বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুরনো হার্ডডিস্কটি বদলে দেয় হাসান ও নোমান। ঘটনার পর সাময়িক বরখাস্ত আকবর তার অস্ত্র টুআইসি হিসেবে হাসানের নিকট জমা দেয়। এরপর আকবরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন হাসান। গত শুক্রবার রাতে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই হাসানকে নগরীর মিরের ময়দানের নগর পুলিশ লাইন্স থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরদিন শনিবার সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মোমেন আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ৩ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়।

শুনানী শেষে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঐ দিন হাসানকে পিবিআই তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরদিন রবিবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য দারোগা আকবরের মোবাইল ফোন ও সিম- পিবিআইর নিজস্ব ল্যাবে পাঠানো হয়। গ্রেফতারের কয়েক দিন পর কানাইঘাটের সীমান্ত এলাকা থেকে আকবরের ২টি মোবাইল ফোন সেট, ৩টি সিম কার্ড, শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি ও পাসপোর্ট সাইজের দু’টি ছবি ও এক নারীর দু’টি ছবি উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে এগুলো আকবরের বলে নিশ্চিত হওয়া গেলেও নারীর ব্যাপারে তেমন তথ্য মেলেনি।

মূল অভিযুক্ত আকবরসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পর ১৩ অক্টোবর মামলাটি কোতোয়ালী থানা থেকে পিবিআই’র কাছে স্থানান্তর করে পুলিশ সদর দপ্তর। এর আগের দিন নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২০। ধারা ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি তৎসহ নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা দায়ের করেন।

রায়হান হত্যার পর ১২ অক্টোবর এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, এএসআই তৌহিদ মিয়া, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাশ ও হারুনুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করে এসএমপি। একই দিন বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজীব হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। আকবরকে পালাতে সহায়তাকারী হিসেবে এসআই হাসান আলীকে ২১ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক সৌমেন মিত্র ও এসআই আব্দুল বাতেনকে ১৮ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পর তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৫ অক্টোবর এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়া রায়হানের বাড়িতে যান। ২২ অক্টোবর কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে এসএমপি থেকে বদলী করে পুলিশ সদর দপ্তর। এসআই আকবর, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু ও হারুন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *