সিলেটে কলেজ ছাত্রকে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

সিলেটে নজির আহমদ মোজাহিদ নামে এক কলেজ ছাত্রকে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ওই কলেজ ছাত্র নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও ঘটনাটি আড়াল করতে মামলায় মিথ্যা আসামি দিয়ে আসামি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ নিয়ে বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভোক্তভোগী সিলেট সদর উপাজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের বড়ফৌদ গ্রামের ফয়জুল হকের ছেলে নজির আহমদ মোজাহিদ।

তিনি এমসি কলেজে বিএসএস পাস কোর্সে অধ্যয়নরত।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে বড়ফৌদ পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের মক্তবঘর এলাকায় সাজানো সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। এলাকার রাজা মিয়াকে দিয়ে তাকে টাকা পাওয়ার কথা বলে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পর পরিকল্পিত সালিশে সশস্ত্র উপস্থিত এলাকার রফিকুল ইসলাম মড়ল (৪০), আফতাব উদ্দিন (৪২), আব্দুর রহিম বাবু (৫০), বশির (৫৫), সুরুজ আলী (৫৭), সুবহান (৬০), সুনান (৫০), ইছমত (৫৫), খালিক (৫৫), মুহিবুর রহমান (৪০), আনিছুর রহমান আয়নিছ (৪৫), আয়নুল হক (৫৫), নুর মিয়া (৬০), সুরুজ আলী (৫৫), রাজা মিয়া (৫৫), সিরাই (৪৫) মিলে তাকে আটকে মারধর করেন। সেখান থেকে তারা তাকে অপহরণ করে রাতের আধাওে গ্রাম পার করে হাওর এলাকায় নিয়ে যায়। এরপর হত্যার জন্য মুহিব, আয়নিছ, খালিক নামে ৩ জনের হাতে তুলে দেয়। তারা হাওরের মাঝখান দিয়ে কমপক্ষে ২ কিলোমিটার জায়গা আমাকে হাটিয়ে রাত ১১ টার দিকে স্থানীয় চেঙেরখালের শাখা ভাদেশ্বর নদীর তীরে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে ছুরি ও বস্তা ছিল। মুহিবের হাতে ছুরা ও বস্তা দেখতে পান তিনি।

মোজাহিদ বলেন, ভাদেশ্বর নদীর তীরে নিয়ে অবস্থানকালে আয়নিছের মোবাইলে ফোন আসে। এরআগে সে মুহিবকে বলে সময় কম, যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। তখন আমার পাহারায় ছিল আয়নিছ ও খালিক। ফোন আসতে আয়নিছ তাকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে কথা বলতে থাকে। ওই সময় মুহিব হত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বস্তায় অর্ধেক মাটি ভরে রাখে। আর খালিক পাশে বসা ছিল। এমন সময় সজোরে লাফ দিয়ে নদীতে পড়ে যান মোজাহিদ। আ্য়নিছও তাকে ধরতে নদীতে লাফ দিয়ে পড়ে। ডুব দিয়ে সাঁতার কেটে দূরত্বে চলে যান মোজাহিদ। আর হত্যার চেষ্টাকারীরা মাঝ নদীতে গিয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তাকে ধরার জন্য চেঁচামেচি শুরু করে। ৩ জনেই নদীতে ঝাঁপ দিলেও সাতার কেটে আমার সঙ্গে পেরে ওঠেনি। তিনি নদী পার হয়ে বিন্নার ঝোপে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু জায়গা অতিক্রম করে দখড়ি গ্রামে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইদুর রহমানের পাকা বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচান। ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সবকিছু শুনে তাকে আশ্রয় দেন। ওই মুক্তিযোদ্ধা তাকে অভয় দিয়ে বলেন, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, হাজারো লোক আক্রমন করলেও তোমাকে আমার বাড়ি থেকে কেউ নিয়ে যেতে পারবে না। রাতে এক আত্মীয়কে ফোন করেও বেঁচে যাওয়ার ঘটনাটি জানানোর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

মোজাহিদ আরো বলেন, তার খোঁজ না পেয়ে বড় ভাই ৯৯৯-এ কল করলে শিবেরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তার খোঁজে বের হন। তার খোঁজ পেতে পুলিশ রাজা মিয়াকে ধরলেও রহস্যজনক কারছে ছেড়ে দেয়। পরদিন সকালে ওই মুক্তিযোদ্ধার ফোনে শিবেরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং চিকিৎসার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এরপর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে হাজির করা হলে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। তাছাড়া এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করলেও এক পুলিশ সদস্য এজাহার লিখে দেন। কিন্তু এজাহারে মুল ঘটনাকে তিনি ভিন্নখাতে নিয়েছেন। তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনেক কিছর বর্ণনা এজাহারে নেই দাবি করেন ওই কলেজ ছাত্র।

তার ভাষ্যমতে, তাকে হত্যা চেষ্টার নেপথ্যের মূূল ঘটনা- গ্রামের একটি বিষয়ে তার ছোট ভাই বশির আহমদকে জোর পূর্বক মিথ্যা সাক্ষি দিতে বলেন কথিত সালিশের লোকজন। তাদের ধারণা ছিল, তারর ছোট ভাই ওই ঘটনাটি জানে। সেই থেকে বিভিন্ন সময় তারা আমাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে একঘরে করে দেয়। এরপর শিবেরবাজারের পাশের গ্রাম দিঘিরপাড়ের আতাউর রহমানের সঙ্গে তার আর্থিক লেনদেন ছিল। যা পরিশোধ করে দিলেও টাকা পায় বলে মিথ্যা অপবাদ তুলে আতাউর। এরই জের ধরে আমার গ্রামের সুবহান মিয়ার গরু শিবেরবাজারে বিক্রি করতে নিয়ে গেলে বিক্রিত গরু হাসিল করার পর বাড়িতে নিয়ে আটকে দেয় আতাউর। এ নিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বও দিনে ইউনিয়ন পরিষদে তার উপর বিচার বসালে ইজ্জতের ভয়ে আমি ৫ হাজার টাকা দিয়ে দেন। এরপরও আতাউর রহমান বলে, মুসলেহ নামে আমার গ্রামের আরেক লোকের কাছে ৩০ হাজার টাকা পায়। তার ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল হামিদ ও রাজা মিয়াকে বলে দেওয়া হয়, মুসলেহ’র কাছে টাকা পায় আতাউর। রাতে গ্রামে আবার ওই বিষয় নিয়ে পরিকল্পিত সালিশ বসিয়ে হত্যা চেষ্টায় জড়িত উল্লেখিত সকলে বলে- মুসলেহ ও ইউনিয়ন বুঝিনা তুই  মোজাহিদ) টাকা দিতে হবে। এটা বলেই পরিকল্পিত সালিশের নামে তাকে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টা করা হয়। মূলত, ইউনিয়নে বিচার থেকে শুরু করে সালিশে থাকা লোকজনের সঙ্গে আতাউর, রাজা মিয়াও অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় জড়িত ছিল। এছাড়া পুলিশের এক সদস্য এজাহার তৈরী করলেও আসামিদের ছাড় দিতে এবং মূল ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এজাহারে অনেক কিছু বাদ দিয়ে দিয়েছেন। যা আদালতে জবানবন্দিতেও বলেছেন, দাবি করেন মোজাহিদ।

তিনি এখনো জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওরা তাকে হত্যা চেষ্টায় হণ্যে হয়ে ঘুরছে। তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। তাই প্রশাসনের মাধ্যমে আইনী সহায়তা চেয়েছেন কলেজ ছাত্র মোজাহিদ।

 

 

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *