সিলেটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নৃত্য-আবৃত্তি-নাটকে জেগে উঠলো মঞ্চ

সিলেটের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট’র ৩ যুগ পূর্তি হলো ২০ সেপ্টেম্বর, রবিবার। ১৯৮৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সিলেটের নাটকপাড়া প্রান্তিক চত্ত্বরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে নাট্য পরিষদ। দীর্ঘ ৩৬ বছরে সিলেটের নাট্য আন্দোলনসহ সাংস্কৃতিক জাগরণে নাট্য পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মঞ্চের পাদপ্রদীপের আলোয় বিগত তিন যুগে মঞ্চালিত হয়েছে অনেক ভাল নাটক। বছরব্যাপী নানা আয়োজনে সিলেটের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে মুখরিত রেখেছে নাট্য পরিষদ।

বিগত ছয়টি মাস বৈষিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে জ্বলেনি মঞ্চের আলো। যে মঞ্চে শিল্পীরা মানবতার সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও নাটক মঞ্চায়ন করত সেই মঞ্চে করোনার এই দুর্যোগকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের কাছে ভালবাসার খাদ্য সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে নাট্যকর্মীরা। ছয়টি মাসের দীর্ঘ বিরতির পর আবার মঞ্চে আলো জ্বলে উঠলো সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট’র তিন যুগ পূর্তি আয়োজনে। প্রায় অর্ধ শতাধিক শিল্পী নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি ও নাটকে অংশ নেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে দর্শক প্রবেশ করেন। পাশাপাশি একটি আসন খালি রেখে দর্শকসারি ছিল পরিপূর্ণ। দীর্ঘ ছয় মাস পর নাট্য পরিষদের এই আয়োজন শিল্প-কলাকৌশলী ও দর্শকরা ছিলেন উৎফুল্ল।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রিকাবীবাজার কবি নজরুল অডিটোরিয়াম মূল মঞ্চে প্রদীপ সকল অন্ধকার দূর করে আলোর প্রত্যাশায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন অতিথিবৃন্দ। সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমেদ চৌধুরী মিশু’র সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্তের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাট্যজন নিজামউদ্দিন লস্কর, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মোকাদ্দেছ বাবুল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট বাউলশিল্পী আব্দুর রহমান, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের পরিচালক কনোজ চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি নিরঞ্জন দে যাদু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম সেলিম, বাংলাদেশ নৃত্য শিল্পী সংস্থার সাধারন সম্পাদক নিলাঞ্জনা যুই, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সহ-সভাপতি উজ্জল দাস প্রমুখ।

নৃত্যশৈলী সিলেট’র নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায় প্রথমেই উদ্বোধনী নৃত্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী মোকাদ্দেছ বাবুল, অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন গীতবিতান বাংলাদেশের শিল্পীরা। মঞ্চে পর পর তিনটি নাটকের নাট্যাংশ মঞ্চায়িত হয়। সিলেটের আঞ্চলিক নাটক হিসেবে নাট্যকার বিদ্যুৎ করের ‘সুরমা কান্দে’ নাটকে নির্দেশনা দেন আফজাল হোসেন। বাংলাদেশের বিখ্যাত নাটক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘নূরুলদিনের সারাজীবন’ নাটকটির প্রস্তাবনা ও প্রধান দুইটি দৃশ্য নাট্যজন অরিন্দম দত্ত চন্দনের নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয়। সর্বশেষ নাটক হিসেবে ২০০ নাটকের নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার’র ‘দ্যা মার্চেন্ট অব ভেনিস’ নাটকটির কোর্ট দৃশ্য নাট্যজন নিজামউদ্দিন লস্কর’র রূপান্তর ও নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয়। তিনটি নাটকে সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সদস্য দলসমূহ থেকে ২৫জন অভিনেতা-অভিনেত্রী অংশ নেন। পরিষদের পক্ষ থেকে বৈষিক মহামারীতে নাটক মঞ্চায়নে বিশেষ অবদানে নাট্যজন নিজামউদ্দিন লস্কর ও নাট্যজন অরিন্দম দত্ত চন্দনকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এছাড়া তিন যুগ পূর্তি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য অংশগ্রহণকারী সংগঠন ও শিল্পীকে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

সন্ধ্যা ৬টা থেকে হলের মূল ফটকে নাট্যকর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বোচ্চ সতর্কতায় দর্শকদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে ও স্যানিটাইজেশনের মাধ্যমে হলে প্রবেশ করা হয়।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *