সিনাগগ কনসার্ট হল রেস্তোরাঁ বানানো হয় মসজিদগুলোকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: ফিলিস্তিনে উসমানীয় খেলাফত আমলের শাসক জাহির আল আল-উমার আল-জায়দানি উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিবরিয়ায় নিজের নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন ১৭৪৩ সালে।

১৯৪৮ সাল পর্যন্ত মসজিদটিতে নামাজ আদায়ে যেতেন মুসল্লিরা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে তাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল উমারি মসজিদ।

কিন্তু ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সেই ধ্বংসস্তূপে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মসজিদটি পরিত্যক্ত হয়।-খবর আনাদলুর

তিবরিয়ার এই ঐতিহাসিক স্থাপনটি জায়দানি মসজিদ নামেও পরিচিত ছিল। মামলুক স্থাপত্যে তৈরি মসজিদটির একটি বিশাল গম্বুজ ও একটি মিনারও ছিল।

ইসরাইলে আরব নাগরিকদের হাই ফলোআপ কমিটির কামাল খতিব বলেন, নাকবার পর অধিকাংশ ফিলিস্তিনিদের মতোই তিবরিয়ার বাসিন্দারা সিরিয়া ও লেবাননে পালিয়ে যান। আর জায়দানির পরিবার নাসিরাত শহরের কাছে চলে যায়।

তিনি বলেন, উমারি মসজিদটি সংস্কার করতে ইসরাইলের কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন জায়দানির পরিবার।

তিবরিয়া পৌরসভা তাদের সেই অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু এই পুরো সময়টিতে মসজিদটি বন্ধ রাখা হয়েছে। মুসল্লিদের সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। কেউ মসজিদটিতে প্রবেশ করতেও পারেননি।

কামাল খতিবের একটি জরিপ থেকে জানা যায়, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ অন্তত ১৫টি মসজিদকে সিনাগগে রূপান্তরিত করেন। এছাড়া ৪০টি মসজিদ হয় ধ্বংস করা হয়েছে, নতুবা বন্ধ কিংবা পরিত্যক্ত করে রাখা হয়েছে। আর ১৭টি মসজিদকে গোলাবাড়ি, বার, রেস্তোরাঁ ও জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে।

উত্তরাঞ্চলীয় শহর সাফেদের আল আহমার মসজিদকে কনসার্ট হল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর কিসারিয়া শহরের আল-জাদিদ মসজিদকে বারে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

হাইফা অঞ্চলে আইন হাউদ মসজিদ, জাফ্ফায় আল-সিকসিক মজজিদকেও একই ভাগ্য বরণ করতে হয়। খতিব বলেন, নাকবার পরে ৫৩৯টি ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করা হয়েছে। মসজিদসহ সব ধরনের ফিলিস্তিনি অবকাঠামো ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের ধ্বংসযজ্ঞের সহজ শিকার ছিল।

নাকবার আগে ফিলিস্তিনি মসজিদগুলো মুসল্লিতে ভরে যেতো। এরপরে সেই মসজিদগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বহু মসজিদ সিনাগগ, বার, জাদুঘর, ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ বানিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

মুসলমানদের অনুভূতিতে সামান্য সম্মান দেখায়নি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। আল জাফফা এলাকায় মুসলমানদের একটি গোরস্তান মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও স্থানীয় লোকজন এই কাজের ব্যাপক বিরোধিতা করেছেন।

তবে মসজিদকে ইবাদত ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে ইসরাইল। ২০১৫ সালের অক্টোবরে ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসরাইলে ৪০০ মসজিদ আছে। গত ২৫ বছরে মুসল্লিদের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

কামাল খতিব বলেন, ইসরাইলের ইতিহাসে কোনো মসজিদ বানানোর মতো ঘটনা ঘটেনি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *