কোম্পানীগঞ্জে জলমহালের মাছ লুট!

করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের ন্যায় দেশ যখন থমকে আছে, আতঙ্কে আছে দেশের মানুষ ঠিক সেই সময়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জের লোমবিল জলমহালে চলছে মাছ লুটপাট। অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষ সবকিছু বন্ধ থাকার সুযোগে জোরপূর্বক জলমহাল সেচে মাছ ধরে নিচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করেও ফল পাচ্ছেন না ইজারাদার পক্ষের লোকজন।

এ অবস্থায় ইজারাদার পক্ষ বুধবার মাছ লুটপাটে বাধা দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়। হামলায় ৪ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ইজারাদার পক্ষের গৌরীনগরের বাসিন্দা সমসুল ইসলাম বাদি হয়ে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০/৪৫ জনের বিরুদ্ধে বুধবার রাতেই মামলা করেছেন। মামলা নং-২ (৪)২০। মামলার তদন্তকারীরা কর্মকর্তা অভিজিৎ দাস জানিয়েছেন, আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার নয়টি কুড়ি সমন্বিত ৮৪/৯০ লোমবিল জলমহালটি ১৪২৫-১৪২৭ বাংলা সনের জন্য ইজারা নেন লোভা হাওর জনকল্যাণ মৎসজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন। পরে ভাগিনামা হিসেবে নুরুল মোস্তাকিম, আলী রাজা, কমর উদ্দিন, রুমেল আহমদ ও সমসুল ইসলামসহ কয়েকজন অংশিদার হন। তারা জলমহালে পোনা মাছ ছাড়াসহ সংরক্ষণ করে আসছিলেন। এমনকি চৌকিদারও নিয়োগ করেন।

সম্প্রতি জলমহালের পার্শবর্তী গোয়াইনঘাটের লাকিগ্রাম ও ফুলতৈলছগামের একটি চক্র জলমহালটি আয়ত্বে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে। তারা ইজারাদার দাবি করে জলমহালে নেমে চৌকিদারকে তাড়িয়ে দিয়ে মাছ শিকারের প্রস্তুতি নেয়। এ অবস্থায় ২ মার্চ কমর উদ্দিন বাদি হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। মামলার পর আদালত ১৪৪ ধারা জারি করেন। থানার এসআই অভিজাৎ দাস আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উভয় পক্ষকে নোটিশও প্রদান করেন। কিন্তু তার পরও দ্বিতীয় পক্ষ সম্প্রতি আবার মৎস আহরণ শুরু করে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত বুধবার জলমহালে মাছ ধরতে শুরু করলে ইজারাদার পক্ষ নিষেধ করতে যান। কিন্তু নিষেধ অমান্য করে শতশত লোক তাদের উপর হামলা করে। তারা একটি সিএনজি অটোরিকশা ও ৩টি মোটারসাইকেল ভাংচুর ও লুট করে নেয়। পরে তোয়াকুল ও দক্ষিণ রণিখাই ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই অভিজিৎ ও সালুটিকর তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক দিলীপ কান্ত নাথসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও তারা ছিল অসহায়। পুলিশের সামন দিয়ে ওই সময় হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে স্থান ত্যাগ করে বলে অভিযোগ করেন ইজারাদার পক্ষের লোকজন। পরে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সজল কুমার কানুও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হামলায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন, ইজারাদার পক্ষের গোয়াইনঘাটের বহর গ্রামের কামাল আহমদ, সালাম আহমদ, কোম্পানীগঞ্জের খাগাইল গ্রামের আনা মিয়া ও বর্ণী গ্রামের আলী রাজা। এ ঘটনায় বুধবার রাতে মামলা করেন সমসুল ইসলাম।

জলমহাল ইজারা প্রসঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য্য জানান, লোভা হাওর জনকল্যাণ মৎসজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মহালটি ইজারা নিয়েছেন। তিনি জানান, জলমহালে আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) তদন্ত করছেন। করোনাভাইরাসের কারণে তদন্ত আপাতত বন্ধ আছে।

এ প্রসঙ্গে ইজারাদার পক্ষের নুরুল মোস্তাকিম জানান, আমরা বৈধ ইজারাদার থাকার পরও জলমহালে নামতে পারছি না। একটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না দেওয়ায় তারা জলমহালে জোরপূর্বক মাছ শিকার করছে। ইতোমধ্যে একাধিক অভিযোগ করার পরও কোনো সুফল পাচ্ছি না।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *