সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সরফরাজ আলী
সাবেক একজন ব্যাংকার মো. সরফরাজ আলীর বিরুদ্ধে জনৈক প্রবাসী আব্দুর রউফের অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে অপপ্রচারকারীর শাস্তি দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মো. আহসান আলীর ছেলে সরফরাজ আলী।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর গ্রামের হরমুজ আলীর ছেলে আব্দুর রউফ মঙ্গলবার একটি টিভি চ্যানেলে তার ৮৩ লাখ টাকা আত্মসাতের সাথে তাঁর সংশ্লিষ্টতা আছে বলে অভিযোগ করেন। এসময় বলা হয়- তিনি নাকি ৩১ লাখ টাকা পরিশোধও করেছেন। এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি দুটি অনলাইন নিউজ পোর্টালেও ৭৬ লাখ টাকা আত্মসাত ও ২৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রউফ অভিযোগ করেন, সরফরাজ আলীকে নাকি ওয়ান ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করেছেন। দেশের একটি টিভি চ্যানেলে বলা হয়- টাকা আত্মসাতের পর তিনি চাকুরী ছেড়ে দিয়েছেন। এ অভিযোগ এবং সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এসব সংবাদে তার বিরুদ্ধে ন্যুনতম কোন ধরণের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। একেক সময় একেক বক্তব্যই আব্দুর রউফের মিথ্যাচারের প্রমান করে।
লিখিত বক্তব্যে সরফরাজ আলী বলেন, আব্দুর রউফ তার নিজের হিসাব নম্বর থেকে নিজে টাকা উত্তোলন, স্থানাস্তর, ডাবল স্কিন, সঞ্চয়পত্র ক্রয়, এফডিআর সহ লেনদেন করেছেন। যার প্রমাণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পেয়েছে।
সরফরাজ আলী ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর সিলেটের বাইরে তাঁর বদলী ও পারিবারিক সমস্যার কারনে স্বেচ্ছায় চাকুরি থেকে অব্যাহতি নেন। অথচ তিনি বরখাস্ত হয়েছেন বলে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলেন তিনি উল্লেখ করেন, এক সময়ের অসহায় আব্দুর রউফকে তার শ্বশুর ইদ্রিছ আলী নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন এবং পরবর্তীতে দুঃসম্পর্কের ভাতিজী যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রতিবন্ধী নাজমা বেগমের সাথে বিয়ে দেন। সে সুবাদে আব্দুর রউফ যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। যুক্তরাজ্যে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্ত আব্দুর রউফের স্ত্রী নাজমা বেগম তার উপার্জিত টাকা অগ্রণী ব্যাংকের লালাবাজার শাখায় জমা রাখেন। পরবর্তীতে স্ত্রীর একাউন্ট থেকে প্রতারণা করে আব্দুর রউফ চেকের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক বা শাখায় তার নিজ একাউন্টে টাকা স্থানান্তর করেন। আব্দুর রউফের স্ত্রী তার নিজ একাউন্ট থেকে টাকা স্থানাস্তর হওয়ার বিষয়ে অবগত হলে তিনি অগ্রণী ব্যাংক লালাবাজার শাখায় যোগাযোগ করেন। এসময় তিনি কর্তৃপক্ষকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে তার নিজ একাউন্টে লেনদেন বন্ধ করার আবেদন করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আবেদনটি গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রেজিষ্টার চিঠিতে আব্দুর রউফের স্ত্রী নাজমা বেগম তাকে ও তার স্ত্রীকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানান। এ চিঠিতে তিনি উলেখ করেন, আব্দুর রউফ একজন লোভী ও প্রতারক প্রকৃতির মানুষ। চিঠিতে আব্দুর রউফের স্ত্রী বলেন, তার স্বামী ৪টি সন্তান রেখে প্রতিবছর দেশে আসেন এবং টাকা সরানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন। পাশাপাশি তার স্বামীর চারিত্রিক বিভিন্ন সমস্যাও তিনি তুলে ধরেন। প্রতারণার বিষয়টি জেনে নাজমা বেগমকে সহযোগিতার জন্য আব্দুর রউফের সাথে যোগাযোগ করেন এবং টাকা ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানান। এতে আব্দুর রউফ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এ অবস্থায় আব্দুর রউফ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও হেয় প্রতিপন্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এমনকি তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে আব্দুর রউফ ও তার বোন জামাই মো. জমির আলীর বিরুদ্ধে সরফরাজ আলী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।
তিনি বলেন, ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর আব্দুর রউফ ৩০ লক্ষ টাকার ডাবল স্কিম হিসাব খুলেন। ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল নিজ নামে তিনি ৩০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেন। এছাড়া ওয়ান ব্যাংক ইসলামপুর শাখা থেকে ৬০ লক্ষ টাকা স্থানাস্তর করে সিলেট শাখায় ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর আরো ৭০ লক্ষ টাকার ডাবল স্কিম একাউন্ট খুলেন। আব্দুর রউফ অভিযোগ করেছেন, তিনি ২০১২ সালে টাকা ব্যাংকে রেখে যুক্তরাজ্যে ফিরে যান আর ২০১৯ সালে দেশে ফিরলে টাকা আত্মসাত হয়েছে বলে জানতে পারেন। এ বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি প্রতিবছরই দেশে এসেছেন এবং ব্যাংকে লেনদেন করেছেন। তাকে দেয়া আব্দুর রউফের স্ত্রীর চিঠিসহ পাসপোর্ট দেখলে এর প্রমাণ পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, আব্দুর রউফের এসব ষড়যন্ত্রের পেছনে তার স্ত্রীর টাকা আত্মসাত ও পারিবারিক কলহ রয়েছে। আব্দুর রউফ ও তার স্ত্রীর মধ্যে দ্ব›দ্ব নিয়ে লন্ডনেও উভয়পক্ষের আত্মীয়স্বজন ও মুরব্বিদের উপস্থিতিতে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে আব্দুর রউফ তার স্ত্রীর সম্পূর্ণ টাকা ফেরত প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে টাক ফেরত না দিতে তিনি এ ধরণের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করে অন্যের উপর দোষ চাপাচ্ছেন।
কিছুদিন পূর্বে তার বিরুদ্ধে দুটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রচার হলে তিনি ১০ ফেব্রুয়ারি ৫০০/৫০১ ধারায় সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মানহানী মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারী আব্দুর রউফকে অভিযুক্ত করেছেন। পিবিআই মামলাটি তদন্ত করছে।
আব্দুর রউফের মিথ্যাচার ও টাকা আত্মসাতের অপবাদে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও মিথ্যা ও বানোয়াট বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় মানহানি ও পারিবারিক মানমর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে।
এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।