দিল্লি সহিংসতা: সোনিয়া গান্ধীর প্রশ্ন, অমিত শাহ কোথায়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: ভারতের রাজধানী দিল্লিতে গত কয়েকদিনের সহিংসতায় ২০ জন নিহত হবার প্রেক্ষাপটে ভারত এবং ভারতের বাইরে বিভিন্ন জায়গা থেকে এর নিন্দা জানানো হয়েছে।

ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী দিল্লির সহিংসতাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

দিল্লিতে কংগ্রেস সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেন সোনিয়া গান্ধী। বিজেপি নেতারা ঘৃণা ছড়াচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

পরিস্থিতি বেশ নাজুক হিসেবে উল্লেখ করে সোনিয়া গান্ধী বলেন, ঘটনার শুরুতেই নিরাপত্তা বাহিনী তলব করা উচিত ছিল।

সোনিয়া গান্ধী বলেন, “কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের নীরবতা একটা আঘাত”

দিল্লি সহিংসতার দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিতে হবে – একথা উল্লেখ করে সোনিয়া গান্ধী প্রশ্ন তোলেন, “অমিত শাহ কোথায়? পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে জেনেও কেন তিনি আধাসামরিক বাহিনী তলব করেননি?”

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে দেখা করেছেন।

মি: কেজরিওয়াল বলেছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজক এবং পুলিশের পক্ষে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী তলব করা উচিত।

ভারতের বাইরে প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

ভারতের বাইরে সবচেয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

মি: খান এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, নাৎসিদের দ্বারা অনুপ্রাণিত আরএসএস ১০০ কোটির বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত পারমানবিক শক্তিধর দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

তিনি বলেন, যখন কোন উগ্র মতাদর্শ নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন সেটি রক্তপাতের দিকে যায়।

ইমরান খান লিখেছেন, ভারতের ২০ কোটি মুসলমান জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করা হয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের এখন পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফেন ডুজারিক এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, জাতিসংঘ মহাসচিব ঘটনাপ্রবাহ গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মি: ডুজারিক বলেন, শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিক্ষোভ চালতে দেয়া উচিত এবং নিরাপত্তা বাহিনীর উচিত সংযম প্রদর্শন করা।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ভারতে যেসব রাজনীতিবিদ বক্তৃতার মাধ্যমে ঘৃণা ছড়িয়ে সহিংস পরিবেশ তৈরি করছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক অভিনাশ কুমার বলেন, এর আগে জামিয়া মিল্লিয়া ইউনিভার্সিটি এবং জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটিতে যেসব সহিংসতা হয়েছে সেগুলোর আগে রাজনীতিবিদরা ঘৃণা ছড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছে।

” ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ঘৃণা ছড়িয়ে যেসব বক্তব্য দেয়া হচ্ছে সেগুলোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিশ্চুপ রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর অবশ্যই নিন্দা জানানো উচিত,” বিবৃতিতে বলেন অভিনাশ কুমার।

মি: কুমার বলেন, যেসব রাজনীতিবিদ ঘৃণা ছড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছেনা। ফলে সহিংসতা উস্কে দিতে অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে বলে মি: কুমার উল্লেখ করেন।

দিল্লির সহিংসতা নিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনার মুখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটারে এক বার্তায় শান্তি এবং সৌহার্দ্য বজায় রাখার আহবান জানিয়েছেন।

মি: মোদী লিখেছেন, ” দিল্লির ভাই-বোনদের প্রতি আমি আহবান জানাই তারা যাতে সবসময় শান্তি এবং ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখে।”

দিল্লির সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন মার্কিন আইন-প্রণেতা। কংগ্রেস ওমেন প্রামিলা জায়াপাল বলেছেন, ” ভারতে যেভাবে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বেড়েছে সেটি ভয়াবহ। ”

টুইটারে এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, ” গণতান্ত্রিক দেশে বিভাজন এবং বৈষম্য সহ্য করা যায়না। এমন কোন আইন করা উচিত নয় যেটি ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেছেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। তিনি বলেন, শান্তিপ্রিয় বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

মার্কিন কংগ্রেস-ম্যান অ্যালান লোয়েনথান এই সহিংসতাকে নৈতিক নেতৃত্বের করুণ পরাজয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

কংগ্রেস ওমেন রাশিদা তালিব টুইটারে এক বার্তায় লিখেছেন, ” এ সপ্তাহে ট্রাম্প ভারত সফর করেছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে এখন দিল্লিতে মুসলিমদের টার্গেট করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হচ্ছে। “

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *