সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ : অনিয়মের সঙ্গে ধীরগতি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:: হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে ধীরগতি ভাবিয়ে তুলেছে কৃষকদের। এখন পর্যন্ত কাক্সিক্ষত কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। বাঁধের কাজের কম্পেকশন নিয়ে খোদ প্রশাসনই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

তবে পিআইসি গঠন নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তও চলছে। তাছাড়া প্রকল্প গ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। পিআইসিরা দুর্নীতিতে জড়িত একজন সংসদ সদস্যও সম্প্রতি প্রতিমন্ত্রীর একটি সভায় স্বীকার করেছেন। তাই কাজ ও প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৭২৫টি (অনুমোদনের অপেক্ষায় ৫৩টিসহ ৭৭৮টি) পিআইসিতে ১২৮.৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮টি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বছর ৬৩৩.৬৯ কি.মি. বাঁধ মেরামত ও সংস্কার করার কথা। গত ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরুর কথা থাকলেও এখনো সবগুলো প্রকল্পে কাজ শুরু করা যায়নি। যেসব এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে তাও সন্তোষজনক নয়। যার ফলে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে হাওরের ফসল অরক্ষিত অবস্থায় পড়েছে বলে মনে করেন সুধীজন।

আর এ নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর মতবিনিময়সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুধীজন। তবে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক আশ্বস্ত করেছেন যথাসময়েই কাজ শেষ করা হবে।
কৃষকদের অভিযোগ- নামকাওয়াস্তে গণশুনানী করে পছন্দের লোক নিয়েই পিআইসি গঠন করা হয়েছে। অনেক স্থানে প্রয়োজন না থাকার পরও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া অক্ষত প্রকল্পেও সমান বরাদ্দ দিয়ে সরকারি অর্থ অপচয়ের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ আছে। পুরনো প্রকল্পগুলোতে প্রলেপ দিয়ে অর্থ লোপাটের চেষ্টা চলছে এমন একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আলী আমজদ গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বলেন, আমি ধর্মপাশার একাধিক ফসলরক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করে দেখেছি কাজ সন্তোষজনক নয়। প্রয়োজন নেই এমন স্থানে প্রকল্পে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে হাওরকে পুকুর বানানো হচ্ছে। যে কারণে হাওরের পানি নিষ্কাশনে বিলম্ব হচ্ছে। হাওরকে পুকুর বানানোর প্রকল্প থেকে তিনি সংশ্লিষ্টদের সরে আসার আহ্বান জানান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, বিভিন্ন উপজেলা আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। সর্বত্রই কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রামাণ্য চিত্র দেখেছি। প্রয়োজন নেই এমন প্রকল্পের হিড়িক রয়েছে। তাছাড়া কাজও সন্তোষজনক নয়। তিনি বলেন,এখন বলা হচ্ছে হাওরের পানি নামছেনা বলে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। কিন্তু হাওরের ফসলের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে খাল বিল নদী খনন করার কথা বলা হলেও এখন কোন যুক্তিতে বলা হচ্ছে হাওরের পানি নামছে না। তাহলে খননে দুর্নীতি ও অনিয়ম স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে?

কৃষক নেতা অমরচাঁন দাস বলেন, হাওরের বাঁধের কাজ সন্তোষজনক নয়। কোনমতে মাটি ফেলে গেলেও মাটি কম্পেকশন করা হচ্ছে না। দুর্বাঘাস লাগানোর উদ্যোগও নেই। হাওরের বাঁধের টাকা লোপাট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের দিরাই-শাল্লায় আশানুরূপ কাজ হচ্ছে না। যার ফলে কৃষকরা চিন্তিত।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, তাহিরপুরসহ কয়েকটি এলাকা থেকে পানি না নামায় কাজের গতি কিছুটা ধীর। তবে অন্যান্য এলাকায় কাজ হচ্ছে। যথাসময়েই কাজ শেষ করা হবে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *