করোনার শঙ্কার মধ্যেই বার্ড ফ্লু উদ্বেগ

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক:: চলমান করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই চীন-সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশে শুরু হয়েছে বার্ড ফ্লু মহামারি। করোনাভাইরাসের লক্ষণমুক্ত থাকলেও আগে থেকেই বার্ড ফ্লু আছে বাংলাদেশে। পোল্ট্রি খাতে দেশে এর আগে একাধিকবার মহামারি ঘটে যায়। এ ছাড়া বার্ড ফ্লুতে মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে দেশে। ফলে চীন-সৌদি আরবের বার্ড ফ্লু নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে দেশের জনস্বাস্থ্যবিদ ও প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। এদিকে চীনের উহানে আটকে পড়া আরো ১৭১ জন বাংলাদেশিকে শিগগিরই দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এখনো এ বিষয়ে দিনক্ষণ ঠিক হয়নি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি সতর্ক আছি। তবে আমাদের সমস্যা হচ্ছে, এখনো আমরা বার্ড ফ্লুর ভ্যাকসিন ব্যাপকভাবে দেওয়ার প্রয়োজনীয় অনুমতি পাইনি। এই প্রক্রিয়া চলছে। এটি দ্রুত সম্পন্ন হলে আমাদের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।’

প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথুরাম সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চীন ও অন্যান্য জায়গার বার্ড ফ্লু পরিস্থিতির দিকে আমাদের নজর রয়েছে। আমাদের এখানে যেহেতু আগে থেকেই আছে তাই পরিস্থিতি যাতে খারাপ না হয় সে জন্য আমরা সব খামারিকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে অল্প পরিসরে হলেও বার্ড ফ্লুর ভ্যাকসিন আছে। কোনো কোনো খামারি ভ্যাকসিন দেয় আবার অনেকে ঠিকমতো ভ্যাকসিন দেয় না বলে মাঝেমধ্যে অল্প কিছু বার্ড ফ্লু দেখা যায়। তাই এখন আমরা পর্যবেক্ষণ আরো বাড়িয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছি।’

এ বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাখিজাতীয় প্রাণীর বার্ড ফ্লুর বিষয়টি প্রাণিসম্পদ বিভাগ দেখছে। চীনে মানবদেহে করোনাভাইরাসের মহামারির পাশাপাশি পোল্ট্রি খাতে বার্ড ফ্লুর (এই৫এন১) মহামারি চলছে। তবে মানবদেহের বার্ড ফ্লু (এইচ৭এন৯) এবার দেখা যাচ্ছে না। তবু আমরা দেশে করোনার পাশাপাশি এদিকেও নজর রাখছি। কারণ দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার নজির মানুষ ও প্রাণী উভয় ক্ষেত্রেই আছে। আমরা আগে থেকেই সার্ভেইল্যান্সের আওতায় মানবদেহে এইচ৭এন৯-এর ওপর নজর রাখছি।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব সেলের উপপরিচালক ডা. শামীমা আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বিভিন্ন খামার ও হাটবাজারে পর্যবেক্ষণ করে থাকি। মাঝেমধ্যে এখনো দু-একটি করে কেস পাওয়া যায়। তবে আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক আছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু চীনে করোনাভাইরাসের উৎস একপর্যায়ে প্রাণী থেকে এসেছে বলে আমরা শুনেছিলাম, তাই আমরা এ বিষয়ে আইইডিসিআরকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে আমাদের কী করার আছে তা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই দপ্তর থেকে কিছু জানানো হয়নি।’

এদিকে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী গতকাল এক অবহিতকরণ সভায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিষয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আশকোনা হজ ক্যাম্পে সাতটি ডরমিটরিতে চীনফেরত ৩০২ জন বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তাঁদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এঁদের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত একজন শিশুকে মা-বাবাসহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের প্রতিদিন দুই বেলা মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ওই ক্যাম্পে থাকা চীনফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদের সার্বিক বিষয় অবহিত করার জন্য আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় আইইডিসিআরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিতভাবে এ কার্যক্রম চলবে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গতকাল রাত পর্যন্ত আশকোনা হজ ক্যাম্পে চীনফেরত বাংলাদেশি ৩১২ জনের মধ্যে ৩০০ জন রয়েছেন। বাকি ১১ জন সিএমএইচ ও একজন কুর্মিটোলা হাসপাতালে আছেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *