সুনামগঞ্জের জননেতা আয়ূব বখত জগলুল এর দ্বীতীয় মৃত্যুবাষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:: সুনামগঞ্জ এর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য জননেতা আয়ূব বখত জগলুলের স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, আয়ূব বখত জগলুল আমৃত্যু আপসহীন সাহসী আদর্শবান নেতা ছিলেন। তিনি স্রোতের বিপরীতে গিয়ে সততার সঙ্গে রাজনীতি করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। নীতির প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি। তাঁর সময়েই সুনামগঞ্জ পৌরসভা দৃষ্টিনন্দন রূপ পয়েছে। দৃশ্যমান উন্নয়নে তিনি নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করেছিলেন। তাঁর সময়ে নাগরিকরা সুবিচার ও নিরাপত্তা পেয়েছে।

জগলুলের জন্য এখনো এই শহরবাসী নীরবে কাঁদে। জগলুলের মৃত্যু হলেও তাঁর কর্ম ও সৃজনের মৃত্যু নেই।

শনিবার বিকেলে শহরের শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়ূব বখত জগলুল স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় সুধীজন এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ ধূর্জটি কুমার বসু, অ্যাডভোকেট হোসেন তওফিক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রইছ উদ্দিন, প্রফেসর পরিমল কান্তি দে, অ্যাডভোকেট মো. চাঁন মিয়া, যোগেশ্বর দাস, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা উদীচী’র সভাপতি শীলা রায়, দৈনিক সুনামকণ্ঠ সম্পাদক বিজন সেন রায়, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, অ্যাডভোকেট পীর মতিউর রহমান, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান সিরাজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন, অ্যাডভোকেট নান্টু রায়, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম শেফু, মফিজুল হক, আব্দুল মতিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক পিপি ড. খায়রুল কবীর রুমেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, আ.লীগ নেতা জসিম উদ্দিন দিলীপ, সাবেক প্যানেল মেয়র মনির উদ্দিন, আক্তারুজ্জামান সেলিম, অ্যাড. মণীষ কান্তি দে মিন্টু, নাদীর আহমদ, জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু, ইয়াকুব বখত বহলুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সোয়েব আহমদ চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ সুজন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন প্রমুখ।

স্মরণসভা সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শাহ আবু নাসের, যুবলীগ নেতা বিজয় তালুকদার বিজু ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাড. বিমান কান্তি রায়।

স্মরণসভায় সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলীয় হুইপ অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, আমি কোনো সময় প্রয়াত আয়ূব বখত জগলুলের পক্ষে, কোনো সময় বিপক্ষে রাজনীতি করেছি। এমপি হওয়ার পর উনার কাছ থেকে বিভিন্ন কাজে পরামর্শ পেয়েছি। তিনি আমাকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কার্ড নিয়ে আসার জন্যে বলেছিলেন। মৃত্যুর আগের দিন ঢাকায় আমাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার জন্যে কেন্দ্রীয় এক নেতার কাছে সুপারিশ করেছিলেন। আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, আয়ূব বখত জগলুল বিরুদ্ধ স্রোতের বিপরীতে রাজনীতি করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। কখনও নীতির বিরুদ্ধে আপস করেননি। তিনি আদর্শিক রাজনীতিতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেছেন। শহরবাসীর সাহসের ঠিকানা ছিলেন আয়ূব বখত জগলুল। তিনি চাইলে ক্ষমতার প্রভাবে বিত্তবৈভবের মালিক হতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি কখনোই করেননি। তাঁর মতো সৎ নিষ্ঠাবান নেতার আজ বড় অভাব। ব্যক্তি জগলুলের মৃত্যু হলেও আদর্শিক জগলুলের মৃত্যু নেই।

আয়ূব বখত জগলুলের স্মৃতিচারণ করে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, কখনও প্রত্যাশা করিনি জগলুল ভাইয়ের স্মরণসভায় বক্তব্য দিতে হবে। মৃত্যুর আগের দিন তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে। সুনামগঞ্জের উন্নয়নের জন্য কথা বলতে। আয়ূব বখত জগলুল একজন প্রশাসক ও দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন। পৌরসভাকে আগলে রেখেছিলেন সন্তানের মতো। তিনি পৌরসভার আমূল পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছিলেন। আয়ূব বখত জগলুলের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করতে মেয়র নাদের বখতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, আমি মেয়র জগলুলকে দেখিনি। পত্রপত্রিকা ও লোকমুখে যা শুনেছি তা থেকে বুঝতে পেরেছি আয়ূব বখত জগলুল ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা। সুনামগঞ্জ পৌরসভাকে মডেল পৌরসভায় রূপ দিতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তাঁর অসমাপ্ত স্বপ্নকে বাস্তবিক রূপ দিতে নতুন প্রজন্মকে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে।

জেলা উদীচী’র সভাপতি শীলা রায় বলেন, জগলুলের সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। পিতা হোসেন বখতের প্রভাব পড়েছিল জগলুলের উপর। অসীম সাহস আর অকুতোভয় ছিল সে। সে সকল কাজে দূরদৃষ্টি ও তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন জ্ঞানের অধিকারী। সে অসীম সাহসিকতার সহিত পৌরএলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে শহরবাসীকে একটি দৃষ্টিনন্দন পৌরসভা উপহার দিয়েছিল। তাঁর অকালে চলে যাওয়াটা অপূরণীয় ক্ষতির।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল প্রয়াত আয়ূব বখত জগলুলের সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেন, জগলুলের সাথে আমি রাজনীতি করেছি। সে অসীম সাহসী রাজনীতিবিদ ছিল। হামলা, মামলা, জেল, জুলুম নির্যাতন সহ্য করে স্বল্প সময়ে জগলুল সরকারি কলেজের জিএস, ভিপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরপিতা হয়েছিলেন। তাঁর জন্য এ শহর নীরবে কাঁদে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের যুগে একজন জগলুলের খুব প্রয়োজন।

অ্যাডভোকেট রইছ উদ্দিন আহমদ বলেন, মেয়র জগলুল কোনো হাইব্রিড নেতা ছিলেন না। তিনি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে উঠে এসেছেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল এই শহরকে গড়ার। তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান মেয়র নাদের বখতকে দায়িত্ব নিতে হবে।
অ্যাড. মতিউর রহমান বলেন, আয়ূব বখত জগলুলের কোনো বাজে অভ্যাস ছিল না। সে একজন সৎ ও সাদামনের মানুষ ছিল। রাজনীতিতে সে আমার অনুজ হলেও স্বমহিমায় নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে।

সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমদ বলেন, আয়ূব বখত জগলুল কখনও সন্ত্রাসের সাথে আপস করেননি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও উদার মনের। তিনি দল-মত নির্বিশেষে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন এই শহরবাসীর কাছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. চাঁন মিয়া বয়েন, জননেতা জগলুল একটি নাম, একটি ইতিহাস। যিনি আজীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। তিনি ছিলেন সততা ও আদর্শের প্রতীক। নতুন প্রজন্মকে তাঁর জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন বলেন, মেয়র জগলুল ছিলেন একজন কর্মীবান্ধব নেতা। এ শহরকে বাসযোগ্য করতে তাঁর অবদান অগ্রগণ্য।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *