সিলেট নিউজ টাইমস্-প্রতিবেদক:: হবিগঞ্জের মাধবপুরে ট্রাকের ভেতরে ফিল্মি স্টাইলে খুন হয়েছেন চালক-হেলপার।এ ঘটনার মূলহোতা ঘাতক চালক ও হেলপারসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগরীর মোগলা বাজার থানার ওসি আক্তার হোসেন। এদিকে, হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতকরা। বিষয়টি নিয়ে সিলেট বিভাগ জুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
পুলিশ সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে সিলেটের লালমাটিয়া এলাকাস্থ সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড়ের দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথে (সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক) একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪০৩০) পরিত্যাক্ত অবস্থায় দেখে সিলেট মহানগরীর মোগলা বাজার থানা পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন।
পুলিশ খবর পেয়ে ওসি আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাকের ভেতর থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরে পুলিশ নিশ্চিত হয় নিহত চালক জাহাঙ্গীর মিয়া ও রাজু মিয়ার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানায়। খবর পেয়ে বাড়ি থেকে লোকজন এসে তাদের লাশ সনাক্ত করেন স্বজনরা এবং নিহত রাজুর বড় ভাই সুজন আহমদ বাদী হয়ে মোগলাবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্রধরে ওই ট্রাকের পুরাতন চালক ইব্রাহিম, হেলাপার ফজর মিয়া ও জয়নাল মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
তবে গতকাল শনিবার সংশ্লিষ্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তারা।
আদালতের বরাত দিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা জানান, ট্রাকের মালিক চুয়াডাঙ্গার আতাউর রহমান পুরাতন চালক ইব্রাহিম ও হেলপার ফজর মিয়াকে চাকরিচ্যুত করে জাহাঙ্গীর ও রাজু মিয়া নামে দুই ব্যক্তিকে চালক ও হেলপার হিসেবে নিয়োগ দেন। এতে ভেতরে ভেতরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে পুরাতন চালক ইব্রাহিম ও হেলপার ফজর মিয়া।
এরপর গত বৃহস্পতিবার মালিকের নির্দেশে ঢাকার গাজীপুরে ট্রাকটি নতুন চালক-হেলপারকে বুঝিয়ে দেয় পুরাতন চালক ও হেলপার এবং ওই দিনই একটি কোম্পানির মালামাল নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন নতুন চালক ও হেলপার। এসময় সিলেটে নিজ বাড়িতে ফিরে আসার উদ্দেশ্যে ট্রাকেই তাদের সহযাত্রী হন পুরাতন চালক ইব্রাহিম ও হেলপার ফজর মিয়া। একপর্যায়ে রাস্তায় পালাবদল করে ট্রাক চালানোর দায়িত্ব নেন পুরাতন চালক ইব্রাহিম। এসময় নতুন চালক জাহাঙ্গীর ও হেলপার রাজু ট্রাকেই ঘুমিয়ে পড়েন। ট্রাকটি হবিগঞ্জের মাধবপুরে আসার পর ঘুমিয়ে থাকা জাহাঙ্গীর মিয়া ও রাজুকে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করেন পুরাতন চালক ইব্রাহিম ও হেলপার ফজর মিয়া। এরপর হবিগঞ্জের জগদীশপুর এসে ট্রাকের ১০টি চাকার মধ্যে চারটি খুলে ও ভেতরে থাকা আরেকটি মিলিয়ে মোট ৫টি চাকা জনৈক জয়নাল মিয়ার কাছে বিক্রি করেন ইব্রাহিম ও ফজর। পরে তারা চলে আসেন সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার লালমাটিয়ায়।
তবে সেখানে একটি দেয়ালের সাথে ট্রাকটিকে ধাক্কা লাগিয়ে দুর্ঘটনা সাজিয়ে ভেতের জাহাঙ্গীর ও রাজুর লাশ রেখে পালিয়ে যান ইব্রাহিম ও ফজর। ঘাতক ইব্রাহিম সিলেট সদর উপজেলার বিমানবন্দর থানার ধোপাগুলের ফৌজদার মিয়া তালুকাদেরর ছেলে এবং ফজর আলী বিশ্বনাথের শ্বাসরাম গ্রামের রুস্তুম আলীর ছেলে।
এছাড়া তাদের সহযোগী জয়নাল মিয়া হবিগঞ্জের মাধবপুরের উত্তর বেজুড়া গ্রামের আব্দুল বাছিরের ছেলে জানা যায়।