আন্তর্জাতিক ডেস্ক,
আন্তর্জাতিক আদালতে আনা রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে নিজেই দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ (রোববার) দি হেগের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন অং সাং সু চি।
বিজ্ঞাপন
১১ই নভেম্বর পশ্চিম আফ্রিকার ছোটো একটি দেশ গাম্বিয়ার করা ঐ মামলার বিপক্ষে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমারে সমর্থন আর অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন বিতর্কিত এই নোবেল জয়ী রাজনীতিক।
ইসলামি ঐক্য সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে গাম্বিয়ার আনা এই মামলাটি রোহিঙ্গা হত্যা-নির্যাতন নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলা।
মঙ্গলবার থেকে চারদিন ধরে দি হেগের আদালতে এই মামলার শুনানি চলবে।
মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মিস সু চিকে সাহায্য করতে একদল ‘খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক’ আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এই আইনজীবী কারা- তা অবশ্য খোলাসা করা হয়নি।
মিয়ানমারে হাজার হাজার মানুষ গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন শহরে গণহত্যার মামলায় অং সাং সু চির পক্ষে সমাবেশ করছে।
বিভিন্ন বার্তা সংস্থার খবরে বলা হচ্ছে আজও (রোববার) মধ্যাঞ্চলীয় মনিওয়া শহরে এক সমাবেশে কমপক্ষে তিন হাজার লোক জড় হয়।
বিবিসির বার্মিজ বিভাগের সাংবাদিকরা বলছেন, দি হেগে রওয়ানা হওয়ার আগের দিন গতকাল (শনিবার) রাজধানী নেপিড’তে হাজার হাজার লোক অং সাং সূচির সমর্থনে সমাবেশ করেছে।
আন্তর্জাতিক আদালতে তার সাফল্যের জন্য দেশের বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দির ছাড়াও খ্রিষ্টান গির্জাতেও বিশেষ প্রার্থনা হচ্ছে।
বিভিন্ন শহরে রাস্তার পাশে বড় বড় বিলবোর্ড টাঙ্গিয়ে মিস সূচির সাফল্য কামনা করা হচ্ছে।
পূর্বাঞ্চলীয় একটি শহরে বিশাল এক বিলবোর্ডে আন্তর্জাতিক আদালত ভবনের ছবির ওপর অং সাং সুচির ছবি ছাপিয়ে লেখা হয়েছে – ‘আমরা তোমার সাথে রয়েছি।’
বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, মিস সু চির সমর্থনে পাঁচ দিনের জন্য দি হেগে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে মিয়ানমারের একটি ট্রাভেল এজেন্সি। দুই হাজার ডলারের এই প্যাকেজে অনেক সাড়া পেয়েছে এই কোম্পানি, যদিও এই টাকার বার্মিজদের কাছে অনেক টাকা।
এছাড়া, ইউরোপের বিভিন্ন শহর থেকে অনেক প্রবাসী বার্মিজও দি হেগে হাজির হচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিবিসির বার্মিজ বিভাগ।
কেন নিজে আদালতে যাচ্ছেন সুচি
মন্ত্রী বা কর্মকর্তাদের না পাঠিয়ে নিজে কেন আন্তর্জাতিক আদালতের মুখোমুখি হচ্ছেন অং সাং সু চি?
বার্মিজ দৈনিক ইরাবতি তাদের সাম্প্রতিক এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, “আইন নিয়ে তার কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা না স্বত্বেও মিস সু চি নিজে আদালতে দাঁড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবং তার এই সিদ্ধান্ত সুপরিকল্পিত…তিনি জানেন ‘বামার’ (বার্মার সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠী ) বৌদ্ধরা তার পাশে রয়েছে।”
আন্তর্জাতিক সাময়িকী দি ডিপ্লোম্যাট বলছে, মিস সু চির এই সিদ্ধান্তের পেছনে ক্ষমতাসীন দল এনএলডির জনসমর্থন বাড়ানোর উদ্দেশ্য থাকার অসম্ভব কিছু নয়।
“আগামী বছর মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন..সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে তার এবং তার দলের জনপ্রিয়তা এখনও প্রচুর, কিন্তু অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে তিনি দ্রুত সমর্থন হারাচ্ছেন।”
কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী – টাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক আ্যালায়ান্স আর্মি – গাম্বিয়ার আনা এই মামলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ে তারা সাহায্য করবে।
মিয়ানমারে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিন বছর আগে, রাখাইন প্রদেশের লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চরম নির্যাতন চালিয়ে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার ঘটনা নিয়ে বিশ্বে অং সাং সুচির ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে কলঙ্কিত হয়েছে।
জাতিসংঘ ঐ ঘটনাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে চীন, রাশিয়া, জাপান, ভারতসহ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগের ব্যাপারে চুপ।
আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি শুরুর ঠিক আগেই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মিয়ানমার সফরে যান।
গতকাল (শনিবার) নেপিড’তে তিনি অং সাং সু চির সাথে একান্তে বৈঠক করেছেন।