স্বপ্নের সড়ক কালনী-কলকলিয়া-কৈতক সড়ক, ৬ বছর ধরে প্রকল্প ফাইল বন্দী

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের পূর্বাঞ্চল, শাল্লা উপজেলা, জগন্নাথপুরের কলকলিয়া ইউনিয়নের ভাটি অঞ্চল এবং ছাতকের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৫ লাখ মানুষের স্বপ্নের সড়ক কালনী-কলকলিয়া-কৈতক সড়ক বাস্তবায়নের কাজ ধীর গতিতে হচ্ছে। একারণে ওই অঞ্চলের মানুষ যোগাযোগ বিড়ম্বনায় রয়েছেন। এখনো ওই অঞ্চলের মানুষকে বছরের বেশিরভাগ সময় ট্রলারেই চলতে হয়। অথচ. এই সড়কে কোটি কোটি টাকার কাজ হয়েছে। অসমাপ্ত কাজে গতি কম থাকায় হতাশ স্থানীয়রা। কালনী-কলকলিয়া সড়কের জমি অধিগ্রহণ করে দখল এখনো এলজিইডিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় নি। জমির মালিকদের টাকা এসেছে প্রায় এক বছর আগে, কিন্তু এখনো টাকাও পায় নি জমির মালিকরা।

এই সড়কের কাজ না হওয়ায় দিরাই শহরের পাশ দিয়ে বহমান কালনী নদীর উপর প্রায় ২২ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কালনী সেতু এখনো মানুষের কাজে আসে নি। এই সড়ক বাস্তবায়ন না হওয়ায় দিরাই-শাল্লাবাসীর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। দিরাই-শাল্লার একাংশের মানুষের, জগন্নাথপুরের কলকলিয়া ইউনিয়নের ভাটি অঞ্চলের এবং ছাতকের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের রাজধানী ঢাকায় যেতে ৩ ঘণ্টার পথ এবং বিভাগীয় শহর সিলেটের সঙ্গেও দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্য কালনী-কলকলিয়া-কৈতক সড়ক নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই সড়ক হলে পূর্ব দিরাইয়ের দেড় লাখ মানুষের উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হতো, ছাতকের একাংশের মানুষ রানীগঞ্জ আউশকান্দি হয়ে ঢাকায় যেতে পারবেন। এই সড়ক দিরাই-শাল্লা, ছাতক ও জগন্নাথপুরকে যুক্ত করতো। দিরাই শহরের পাশ দিয়ে যাওয়া কালনী নদীর উপর প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে কালনী সেতু নির্মিত হয়েছে।

২০১৩ সালে এই সেতুর কাজ শুরু হয়ে ২০১৫ সালে শেষ হয়।
২০১৩ সালে কালনী সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করে প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেছিলেন,‘পূর্ব দিরাইয়ের জগদল- হোসেনপুর-কলকলিয়া সড়কের কাজ শেষ হলে এই সেতু দিয়েই আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে দিরাই-শাল্লা। সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেছিলেন, ‘এই সেতু এবং সড়ক হলে ভাটির জনপদ দিরাইয়ের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা হবে। উত্তরাঞ্চলের যেভাবে মঙ্গা দূর হয়েছে, ঠিক একইভাবে দিরাইয়ের দরিদ্র কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে, মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের কাছে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে হবে না।’কিন্তু ছয় বছরেও প্রয়াত সাংসদ সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এবং দিরাই-শাল্লাবাসীর সেই স্বপ্নের সড়কের জমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ হয়নি। কলকলিয়া ইউনিয়নের ৩ বারের সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম বললেন, আমি কলকলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকার সময়ই প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তকে বলেছিলাম জগদল, হুসেনপুর, কলকলিয়া, যোগলনগর, হায়দারপুর ও কৈতককে যুক্ত করা গেলে এই অঞ্চলের যোগাযোগের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। দিরাই-শাল্লার মানুষ কলকলিয়া এসে পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি সড়ক দিয়ে রাজধানী ঢাকায় যেতে পারবেন। ছাতকের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষও এই সড়ক দিয়ে রাজধানী ঢাকায় কম সময়ে যেতে পারবেন। কলকলিয়ার ভাটি অঞ্চলবাসীও উপকৃত হবেন।

পূর্ব দিরাইয়ের সাকিতপুরের জয়নাল আবেদীন সর্দার বলেন,‘কালনী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৬ বছর আগে, কিন্তু কালনী সেতু থেকে জগদল- হোসেনপুর-কলকলিয়ার ২০ কিলোমিটার সড়কের জমি অধিগ্রহণের কাজই এখনো শেষ হয়নি। এই সড়ক হলে দিরাই থেকে পূর্ব দিরাই হয়ে যাওয়া সড়ক সুনামগঞ্জ-পাগলা-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কের কলকলিয়ায় এসে যুক্ত হবে। এর ফলে দিরাই-শাল্লার সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং বিভাগীয় শহর সিলেটের দূরত্ব কমে যাবে। একই সঙ্গে ভাটি অঞ্চলের উপজেলা দিরাইবাসীর বহুদিনের আকাঙ্খিত যোগাযোগ ব্যবস্থার স্বপ্ন পুরণ হবে।
দিরাই-জগদল – হুসেনপুর- কলকলিয়া সড়কের জমি অধিগ্রহণের দুই কোটি ৫২ লাখ টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসেছে ৩ বছর আগে। রোববার পর্যন্ত জমির টাকা বুঝে পেয়েছেন ৩ জন। অথচ. এই সড়কের ৮-১০ টি মৌজায় জমির মালিক আছেন কমপক্ষে দুই শ’ জন। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার মো. আজমল হোসেন বলেন, একবছর আগে জমির টাকা বুঝে নেবার জন্য আমরা নোটিশ দিয়েছি। ৮-১০ টি মৌজার প্রায় ২০০ জমির মালিকের মধ্যে চাঁনপুর ও হোসেনপুর মৌজার কিছু লোকজন যোগাযোগ করেছেন। অন্যরা এখনো যোগাযোগই করেন নি। ২-৩ জনকে টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানালেন, এলজিইডিকে এখনো জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয় নি। জমির মালিকদের টাকা বুঝে নেবার জন্য মাইকিং করা হয়েছে কী-না জানতে চাইলে, তিনি বলেন, মাইকিং করা হবে। এদিকে, পাগলা-জগন্নাথপুর আউশকান্দি সড়ক’এর যোগলনগর থেকে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের কৈতক পর্যন্ত যুক্ত করা সড়কের বেশিরভাগ অংশ আগে থেকেই পাকা রয়েছে। কিন্তু যোগলনগর-শ্রীপতিপুর অর্থাৎ ডাউকা নদীর উপর নির্মিত সেতু’র অ্যাপ্রোচ থেকে মাত্র এক কিলোমিটার সড়ক পাকা না হওয়ায় ছাতকের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষও পাগলা-জগন্নাথপুর সড়কে যুক্ত হচ্ছেন না। আবার পূর্ব দিরাই বা কলকলিয়ার ভাটির মানুষও কৈতক হয়ে সিলেটে যেতে পারছেন না। কলকলিয়া শাহ্জালাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন বললেন, ছাতক – দোয়ারা’র মাননীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের প্রচেষ্টায় শ্রীপতিপুরের পাশে ডাউকা নদীর উপর সেতু হয়েছে। কিন্তু যোগলনগর থেকে শ্রীপতিপুর সেতু পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটার সড়ক পাকা হয়নি। এই অংশকে কমপক্ষে ৩ ফুট উঁচু করে পাকা করতে হবে। এই সড়ক হলে এই দিকেই কৈতক হয়ে কম সময়ে মানুষ সিলেট যেতে পারবে। জগন্নাথপুর উপজেলা এলজিইডি’র উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আমির হোসেন জানালেন, যোগলনগর- শ্রীপতিপুর অংশ জগন্নাথপুর উপজেলার মধ্যে হলেও সড়কের কাজ ছাতক এলজিইডি থেকে করার কথা। কেন হচ্ছে না, আমার জানা নেই।
ছাতক এলজিইডি’র উপসহকারী প্রকৌশলী রজত কান্তি দাস জানালেন, পাগলা-জগন্নাথপুর সড়কের যোগলনগর থেকে শ্রীপতিপুর সড়ক পাকা করণের জন্য ৭০ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার বাছাই করা হয়েছে, কার্যাদেশও দেওয়া হয়েছে, আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডি’র জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানালেন, কালনী- হোসেনপুর- কলকলিয়া সড়ক প্রকল্প’র প্রাক্কলন অনেক আগেই এলজিইডির সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
দিরাই – শাল্লার সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা বলেন, কালনী- হোসেনপুর-কলকলিয়া সড়কের ডিপিপি এলজিইডি সদর দপ্তর থেকে শীঘ্রই একনেকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে । একনেক সভায় অনুমোদিত হলেই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *