অজানা কারণে থমকে আছে সিলেটে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক :: তিন বছর আগে সিলেট নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ শুরু হলেও দুটি ভবন ভাঙার পর তা অজানা কারণে থেমে যায়। সিলেট নগরের ৩৪টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে ২৩টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৬ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ শুরু করে কর্পোরেশন। তাঁতিপাড়া ও বন্দরবাজারের দুটি ভবনও ভাঙা হয়। এরপর এই কার্যক্রম আর সামনে এগোয়নি।

সিসিক এর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে রাস্তা প্রশস্ত করার কাজে আমাদের লোকজন নিয়োজিত থাকায় এই কার্যক্রম চলছে না।বেশ কয়েকবছর আগে জেলা প্রশাসনের একটি মালখানা ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে গণপূর্ত বিভাগ। তারপরও ভবনটিতে দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনটিতে জেলার সকল মামলার আলামত রয়েছে।

সিসিক সূত্র থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালের আগে সিলেট নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কোনো তালিকা ছিল না। মাঝে মাঝে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে কিংবা কোনো ভবনে ফাটল দেখা দিলে নগর ভবন নড়েচড়ে বসত। বিচ্ছিন্নভাবে ওই সময় কয়েকটি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে তারা। ২০০৫ সালের পর আবার নতুন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতের দাবি ওঠে। সে সময় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা নগরীর ৩২টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। সেগুলো হচ্ছে- জেল রোডের সমবায় ব্যাংক ভবন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়, জিন্দাবাজারের কাস্টমস ও ভ্যাট অফিস ভবন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এসএ রেকর্ড অফিস, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজারের সিটি সুপার মার্কেট, জিন্দাবাজারের রহমান প্লাজা, মিতালী ম্যানশন, রাজা ম্যানশন, মিরাবাজারের মডেল স্কুল, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, কারিগরি ইনস্টিটিউট, মদিনা মার্কেট এলাকার কয়েকটি বাসা, দরগাহ গেটের আজমির হোটেল ও মাহমুদ কমপ্লেক্সের পেছনের বাসা,

শেখঘাটের পুরনো পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন বাসা, মদনমোহন কলেজের নবনির্মিত ভবন, মধুবন মার্কেট, পূর্ব শাহি ঈদগাহের অনামিকা এ/৭০ (খান কুঞ্জ), কালাশীল এলাকার মান্নান ভিউ, শেখঘাটের শুভেচ্ছা-২২৬ নম্বর বাসা, চৌকিদেখির ৫১/৩ সরকার ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ, পুরনো লেনের শফিকুল হকের কিবরিয়া লজ, দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলায় সিদ্দিক আলীর ভবন ও খারপাড়ায় মিতালী-৭৪ নম্বর বাসা। এর মধ্যে ২০১৬ সালে শেখঘাটের একটি বাসা, অগ্রগামী বালিকা বিদ্যালয় ভবন, সিসিক মালিকানাধীন মিউনিসিপ্যাল মার্কেটের অংশবিশেষ ও তাঁতিপাড়ার একটি বাসা অপসারণ করা হয়।

সিটি কর্পোরেশনের গা ঘেঁষা ভবন সিটি সুপার মার্কেটও অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এটার মালিক সিসিক। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণের সঙ্গে জড়িত এক বিশেষজ্ঞ বলেন, সরকারি ভবন আগে ভাঙলে এখান থেকে সাধারণ মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে। তবে ভবন ঝুঁকিপূর্ণ মানতে নারাজ সিটি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

শাবিপ্রবির পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এই বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকেই সিসিক ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন ভবন মালিক ও কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে আসছিল। ৮ বছর ধরে চিঠি চালাচালির পর ২০১৫ সালে ভবন অপসারণে উদ্যোগ নেয় সিসিক। এরপর বিভিন্ন স্থাপনা অপসারণ করা হলেও তালিকাভুক্ত বাকি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভাঙার কার্যক্রম আর এগোয়নি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *