সিলেটে পর্যটকদের ঢল, ফাঁকা নেই হোটেল রিসোর্ট

অলক দেবনাথ:: টানা তিনদিনের ছুটি পেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকৃতির অপরুপ সিলেটে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। সিলেটের হাওর, সবুজ চা বাগান, পাথরের পাহাড় আর ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি মনকে স্বপ্নে রাঙায়। এমন লক্ষ্য নিয়ে এসেছেন পর্যটকরা।
পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়ানোর জন্য পছন্দের তালিকায় প্রথমে চলে আসে সিলেটের নাম। তাইতো প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে প্রতি বছরের মতো এবারো সিলেটে পর্যটকদের ঢল নেমেছে।

কিন্তু পর্যটকদের আবাসন সংকটনের কারণে নিমিষেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে বেড়ানোর আনন্দ।হোটেল কতৃপক্ষও বেমালুম বেকায়দায়।
স্বচ্ছ নীল জলরাশি, পাহাড়ে মেঘের লুকোচুরি, দিগন্ত বিস্তীর্ণ হাওরে শান্ত জল, পাল তোলা নৌকা, পাখির কলতান, পাহাড়ে জুম চাষ, হিজল করচের সারি, ভিন্ন ভাষার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্রময় সংস্কৃতি কি নেই সিলেটে!
সিলেটের অন্যতম পর্যটন স্পট গোয়াইনঘাটের জাফলং
তাদের এই আগমনকে ঘিরে হোটেল মোটেলগুলোও ব্যস্তসময় পার করছে। অন্যবারের চেয়ে এবছর পর্যটক বেশি আসছেন বলে দাবি করছেন তারা। পর্যটকদের সুবিধার্থে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দেয়া হয়েছে সকল ধরনের নিরাপত্তা।

পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় সিলেটে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন তারা। সিলেটের অন্যতম পর্যটন স্পট গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল জলারবন, মায়াবন, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, মৌলভীবাজরের লাউয়াছড়া, শ্রীমঙ্গল চা বাগান, জৈন্তার লালাখালসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে এখন পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে।

কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ফলে পর্যটকদের পদচারণায় সরব হয়ে উঠেছে শহরের আবাসিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট সেন্টার এবং গেস্টহাউসগুলো। কেউ কেউ সিট খালি না পেয়ে বিকল্প হিসেবে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে উঠেছেন। অনেকে আবার ভ্রমণে এসে কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে না পেরে কিছু পর্যটন স্পট দেখে দিনের বেলাই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য জানাগেছে, ওপারে মেঘলা পাহাড় আর ঝুলন্ত সেতু, এপারে বিছনাকান্দির নীল জলরাশির স্বচ্ছ পানিতে গা ভাসাচ্ছেন হাজারো পর্যটক। পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের লুকোচুরি খেলা এবং মেঘ উড়ে যাবার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন এপারের অতিথিরা।
সরেজমিন সিলেট নগরীর কয়েকটি আবাসিক হোটেল ঘুরে দেখাযায় অসংখ্য পর্যটক ভীড় আবাসিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্টসেন্টারএবং গেস্টহাউসগুলোর কোথাও কোনো সিট খালি নেই।

এদিকে,পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার জেদান আল মুসা এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পর্যটকরা হচ্ছেন সিলেটের অতিথি। অতিথিদের নিরাপদ ভ্রমণে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হযরত শাহজালাল (রহ.) এবং হযরত শাহপরাণ মাজার এলাকায় রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোনো ধরনের পর্যটক হয়রানির খবর পাওয়া গেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দরগাগেইটস্থ হোটেল হোটেল আল ইবরাজ সৈয়দ জুলফিকার আমদ জানান, পর্যটকদের সামাল দিতে আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছি,তিনদিনের সরকারী ছুটি থাকায় অসংখ্য পর্যটক এসেছেন সিলেটে তাদেরকে ঠিক মত সেবা দিতে না পারায় নিজের কাছেও খারাপ লাগছে।তিনি আরও বলেন সিলেটে আরও আবাসিক হোটেল হওয়া প্রয়োজন।
ঢাকা থেকে আসা বর্ণালী,রাহেল সহ আরও একাধিক পর্যটক এ প্রতিবেদককে বলেন,সিলেটে বেড়াতে এসেছি লাউয়াছড়া উদ্যান, শ্রীমঙ্গলের চা বাগান, বাঁশতলা, মায়াবন, আর পামাইয়ের মনোরম পরিবেশ দেখে খুবই মুগ্ধ হয়েছি।

একইভাবে মুগ্ধ করেছে লালাখালের স্বচ্ছ নীলাভ পানি, পাখির ছড়াছড়ি। তারা বলেন, আগে ফেইসবুকে এসব এলাকার কথা দেখলেও বাস্তবে দেখে নিজেদের গর্বিত মনে করছি।

তারা বলেন, বিছনাকান্দিতে পাথরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সফেদ জলে শুয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। যা মনে থাকবে বহুদিন। একইভাবে বাঁশতলার উপর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কখনো ভোলার নয়। তেমনি মনকে আন্দোলিত করে তুলেছে গোয়াইনঘাটের মায়াবন।
ভালো লেগেছে সুনামগঞ্জের হাওরের পাশেই সবুজ-শ্যামল গ্রামের চিরাচরিত চিত্র, আকাশের সাথে মিশে যাওয়া অবারিত জল, জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য দেখতে ভালো লেগেছে।

পর্যটন এলাকায় পুলিশের নজরদারীও রয়েছে পর্যাপ্ত। সব সময় তাদের সহযোগিতা পাওয়া যায়। পর্যটন এলাকার রাস্তাঘাটগুলো উন্নত করা হলে প্রতিবছর সিলেটে দেশি বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে বলেও পর্যটকরা জানান।

সিলেটে ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা জানান সিলেটে নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র আবিষ্কৃত হচ্ছে। এগুলো সিলেটের জন্য সুখবর বয়ে আনছে। পর্যটন শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করছে।

সিলেটে পর্যটক দিনদিন অনেকগুণ বাড়ছে। অনেকে হোটেল না পেয়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় উঠেছেন। পর্যটকের সুবিধার কথা ভেবে সময় এসেছে পর্যটন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় যত্নবান হওয়া এবং আরও হোটেল মোটেল করতে প্রবাসী এবং ব্যসায়ীদের এগিয়ে আসা।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *