এক সময় ‘সিনেমা হল’ মানুষের খুবই আকর্ষণীয় জায়গা ছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক-শরীফ গাজী:: ৩৬০ আউলিয়ার দেশ সিলেট । এখানে বরাবরের মতই মানুষ গুলো বিনোদন প্রিয় । তারমধ্যে ‘সিনেমা হল’ সিলেটের পূরনো ঐতিহ্যের মধ্যে একটি । একসময় ‘সিনেমা হল’ মানুষের খুবই আকর্ষণীয় জায়গা ছিল। সিনেমা হল গুলোতে ছিল প্রচুর দর্শকদের খুব সমাগম । সিনেমা হল কর্তৃপক্ষের ও প্রচার প্রচারণা ছিল অনাড়ম্বরপূর্ণ ।

সেই পুরানো জীপ গাড়িতে মাইক লাগিয়ে এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতো । রংমহল অথবা কুসুমবাগ সিনেমা হলের অথবা যে কোনও সিনেমা হলের প্রচারের বেলায় গাজি মাজহরুল আনোয়ার এর কন্ঠ নকল করে ফিল্মের প্রচারণা চালানো হতো । সাথে থাকতো ফিল্মের আটস্ট্রিদের নিয়ে ছোট লিফলেট ।

যা আমরা খুব আগ্রহ ভরে শুনতাম আর লিফলেট আনার জন্য ছুটে যেতাম । কিন্তু ছোট থাকার জন্য হলে যেতে পারতামনা ।খুব ইচ্ছে হতো হলে গিয়ে বড় পর্দায় ছবি দেখার জন্য ।বড় ভাইয়েরা অনেক সময় গাড়ি রিজার্ভ করে মুরব্বিদের লুকিয়ে হলে ছবি দেখতে যেতেন । পরে আমাদের এসে ছবির কাহিনী শোনাতেন । আর আমরা খুবই আগ্রহ নিয়ে তা শুনতাম যা বড় পর্দায় না দেখতে পারার আকাঙ্খা ঘুচে যেতো । আর এখন কারো আগ্রহ ইচ্ছে দুটোই নেই হলে গিয়ে ছবি দেখার । এখন হলগুলোর সম্মুখ দিয়ে ইচ্ছে জাগেনা বড় পর্দায় ছবি দেখার । একটা জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৯৮% লোকেরই হলে গিয়ে ছবি দেখার আর আগ্রহ নেই । ফলে সিনেমা হলগুলোর দর্শকদের বিমুখতায় বছরের পর বছর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । গোটা কয়েকজন ছাড়া আর হলগুলোর সামনে দর্শক দেখাই যায়না ।

এতে হল মালিকগন লোকসান গুনেই যাচ্ছেন । ফলে সিলেটের মতো বিভাগীয় শহরের আটটি হলের মধ্যে লালকুটি, অবকাশ, কাকলি, রংমহল, মনিকা দিলশাদ ৬টিই বন্ধ হয়ে গেছে । শুধু ঐতিহ্য ধরে রাখত লোকসান করেও টিকে আছে বিজিবি এবং তালতলার নন্দিতা সিনেমা হল । এর পিছনের কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেল প্রধান কারণ হচ্ছে মানসম্মত ছায়াছবি নির্মাণের অভাব, আর একধরনের কুরুচিপূর্ণ ছবির ভীতি । তাছাড়া হলগুলোর পরিবেশ ও ততটা ভাল না । যা রুচিশীল দর্শকদের আর হলমুখি করতে পারছেনা যদিও মাঝেমধ্যে একটা দুটো ভাল ছবি তৈরি হয় । ঘরে বসে এখন ডিভিডি প্লেয়ার দিয়েই ছবি দেখে। আকাশ সংস্কৃতি বা ডিশ চ্যানেলে রিমোট চেপে চ্যানেল পাল্টিয়ে দেশি বিদেশী ছবি, নাটক বা অন্যান্য বিনোদনমুলক অনুষ্ঠান দেখে সময় অতিবাহিত করছে । ছায়াছবি দেখা বা চিত্তবিনোদন ঘরে বসেই করতে পারতেছে । যদিও অন্যান্য দেশের বিনোদন মাধ্যম গুলোর দিকে তাকালে অন্য দৃশ্যপট দেখা যায় । তাই আমাদের হলগুলো আর কোনোভাবেই দর্শক টানতে পারতেছে না। মাঝেমধ্যে কিছু ছবির প্রদর্শনী হয় তা ও আবার হলগুলোর বাইরে । এতে করে হলগুলোর আর কোনো উন্নয়ন ও করা হচ্ছে না । তাই সিনেমা তৈরিতেও পরিচালক প্রযোজক প্রচুর টাকা খরচ করতে ভয় পান আর আমরা মানসম্মত ছবি পাইনা ।

সুতরাং মানসম্মত ছবি যদি নির্মাণ হয়, হলগুলোর পরিবেশ যদি সুস্থ হয় আর সরকার যদি ভাল ছবি তৈরীতে সহযোগী এবং হলগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয় তদুপরি ছবির প্রদর্শনী হলের বাইরে নয় হলগুলোতে হয় তাহলেই ধীরে ধীরে দর্শক হলমুখি হতে পারে ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *