চাকরির জন্য পাঠানো বায়োডাটার শেষ ঠিকানা ডাস্টবিন!

নিউজ ডেস্ক:: সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়তই লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পরই সংশ্লিষ্ট অফিসের ঠিকানায় জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) পাঠাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন অনেকে। কিন্তু সবার পাঠানো বায়োডাটা (সিভি) কি কর্তৃপক্ষ দেখেন? নাকি তাদের চাহিদা অনুযায়ী আগেই লোক নিয়োগের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে থাকেন?

সম্প্রতি রাজধানীতে এমন চিত্র লক্ষ করা গেছে। চাকরিপ্রত্যাশীরা তাদের বায়োডাটা পাঠিয়েছেন। বায়োডাটা (সিভি) না খুলেই ফেলা দেওয়া হয়েছে রাস্তায়, ডাস্টবিনে। তাহলে চকচকে-ঝকঝকে এসব সিভির অপরাধ কী? চাকরি হোক, না হোক কমপক্ষে সিভিটা দেখতে অসুবিধা কোথায়? এমন প্রশ্ন অনেক বেকার যুবকের। তবে সদুত্তর নেই কারো কাছেই।

একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আমার জীবনে এ রকম অনেক সিভি জমা দিয়েছি সরকারি-বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত অনেক প্রতিষ্ঠানে। দেখেছি সব অফিস আমাকে চাকরির জন্য ডাকেনি। অনেক সময় ব্যাংক ড্রাফট করেছি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে। কোথাও কোথাও ২০০ টাকা দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাকরি চেয়ে যেসব অফিসে আবেদন করেছি, তার অনেক অফিস থেকেই ডাক পাইনি। তবে সরকারি অফিসগুলো থেকে পরীক্ষার জন্য ডাক পেয়েছি। আমি যতগুলো বায়োডাটা (সিভি) জমা দিয়েছি তার মধ্যে অধিকাংশ অফিসই আমার সিভি হয়তো দেখেনি। দেখলে আমাকে চাকরির জন্য তারা ডাকত।’

আব্দুল কাদের রঞ্জু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স-মাস্টার্স পাস করেছেন। থাকেন রাজধানীর মগবাজার এলাকায়। চাকরির সিভি জমা দেওয়া নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা শেষ করে অনেক প্রতিষ্ঠানেই আবেদন করলাম। শত শত আবেদন করেছি। ব্যাংক ড্রাফট করেছি। সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছি। কত সিভি জমা দিলাম কিন্তু সিভিগুলো কোথায় যায় টের পাই না। এখনো চাকরি হয়নি। ঢাকায় থাকি, অনেক খরচ। টিউশনি করে কোনোমতে চলি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) বলেন, ‘কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান মনে করে কাদেরকে দিয়ে কোম্পানির ব্যবসা হবে। কোম্পানি কাদেরকে দিয়ে বেশি আউটপুট নিতে পারবে। শুধুমাত্র শিক্ষাগত যোগ্যতা মুখ্য বিষয় না। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি তার বাস্তব জ্ঞান বা বাস্তবভিত্তিক অভিজ্ঞতাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। দেখা গেল, অনেক সময় মার্কেটিংয়ে এমবিএ করা ছেলে চাকরি জন্য আসছে। কিন্তু এমবিএ করা নেই এমন অভিজ্ঞ লোকও আছে, যাকে নিয়োগ দিলে তার দ্বারা প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা কোম্পানির আয় হবে। তাকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরির জন্য আমাদের কাছে অনেক সিভি জমা পড়ে, সব সিভি অনেক সময় আমরা দেখি না। ফেলে দেই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মিডিয়া হাউসের এইচ আর বিভাগের ম্যানেজার বলেন, ‘কোম্পানির চেয়ারম্যান ও পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাদের কোম্পানিতে লোক দিয়ে থাকি। সে ক্ষেত্রে কোম্পানির সঙ্গে যারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাদের রেফারেন্সে বেশি লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। বাকিদের বায়োডাটা ফেলে দেওয়া হয়।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান চাকরি-প্রত্যাশীদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সিভি জমা নেয়, সঙ্গে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে অনেক অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়, তারা বেআইনি কাজ করে। এটা আইনত অবৈধ, ক্রিমিনাল অপরাধ।’

সে ক্ষেত্রে চাকরি-প্রত্যাশীদের সচেতন হওয়া উচিত কি না?—এমন প্রশ্নের জবাবে অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, ‘সচেতনতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চাকরিপ্রার্থীদের লেনদেন করা উচিত।’

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *