শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ২৯ বছরে পুলিশের আয় ৪ হাজার কোটি টাকা

নিউজ ডেস্ক:: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের একটি আকাঙ্খা থাকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার। মিশনে কাজ করার সুযোগকে অনেকেই সৎভাবে অতিরিক্ত উপার্জনের একটি মাধ্যম মনে করেন। এছাড়াও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যেকোনও বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণের সংশ্লিষ্ট বাহিনী ও দেশের সুনাম অর্জনের বিষয়টিই মুখ্য থাকে।

এ লক্ষ্যে সেই শুরু থেকেই সশস্ত্র বাহিনীর পর পরই পুলিশ সদস্যরাও শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান শান্তি মিশনে সেনাবাহিনীর ১৫ জন সদস্যের যোগদানের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেয় বাংলাদেশ। এর পরের বছর ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেয় বাংলাদেশ পুলিশ। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী শান্তি মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ছয়টি মিশন নিয়োজিত রয়েছে। বর্তমানে এসব মিশনে ৮০৬ জন পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্ত হয় পুলিশ।

এরপর এ পর্যন্ত (২৯ বছরে) পুলিশের ১৮ হাজার ৮৪৬ জন সদস্য মিশন শেষ করেছেন। মিশনে নিয়োজিত জনবল ও সরঞ্জামের ভাতা বাবদ পুলিশ এখন পর্যন্ত চার হাজার ১০১ কোটি এক লাখ ৫৪ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষী সদস্যরা মিশন এলাকার স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দেওয়া, দাঙ্গা দমন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়ে আসছে।

মিশনে সহায়তা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ২০ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন।
মিশনে গিয়েছেন এমন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিশনে গেলে তারা দেশে যে বেতন ভাতা পেতেন সেটাও পেয়ে থাকেন। সঙ্গে মিশনে কাজ করার জন্য জাতিসংঘ থেকে আলাদা ভাতা পেয়ে থাকেন। সেই ভাতার ২০ শতাংশ মিশনে থাকা অবস্থায়ই দেওয়া হয়ে থাকে। দেশে ফিরে আসার পর বাকি অর্থ পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়ে থাকে।

সর্বশেষ গত রবিবার (২ ডিসেম্বর) দক্ষিণ সুদানের দারফুর ও কঙ্গো মিশন শেষ করে দেশে আসা পুলিশ সদস্যদের অর্থ পরিশোধ করে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ইউএন অ্যাফেয়ার্স) নাসিয়ান ওয়াজেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। জাতিসংঘ থেকে পাওয়া এই অর্থের ১০ ভাগ পেয়ে থাকে সরকার।

গত জুন মাসে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের প্রধান জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ সদর দফতর পরিদর্শন করেন। এসময় মিশন প্রধান বলেন, ‘সংঘাতপূর্ণ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পুলিশ শান্তিরক্ষায় অনন্য অবদান রাখছেন। তবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশকে আরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।’

এসময় আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী তাদের বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ সদস্য পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম শীর্ষ দেশ।’ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ পুলিশের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর জন্য শান্তিরক্ষা মিশন প্রধানের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
পুলিশ

পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি সোহেল রানা বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিগত ২৯ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে পুলিশ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন। অর্জন করেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ১২২টি দেশের পুলিশ, আর্মি এবং সিভিলিয়ানরা অবদান রাখছেন। অংশগ্রহণের এই বিশাল মাত্রা শান্তিরক্ষার প্রয়োজনীয়তার প্রতি বিশ্ববাসীর তাগিদবোধকে প্রতিফলন করে। যে কারণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবসময় যুক্ত থাকতে চায় বাংলাদেশ পুলিশ।’

আইএসপিআর এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪০টি দেশে ৫৪টি মিশনে এ পর্যন্ত এক লাখ ৫৬ হাজার ৪০৯ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্য অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১১টি দেশে বাংলাদেশের সাত হাজার ৭৫ জন সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন। এরমধ্যে ১৫৭ জন নারী মিশনে কর্মরত রয়েছেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *