অর্থনীতিতে মিশ্র প্রভাব পড়বে

অর্থনীতি ডেস্ক:: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব ধরনের কর্মকাণ্ড এখন হয়ে যাচ্ছে নির্বাচনমুখী। নির্বাচনী পরিবেশ কেমন হয় এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা শঙ্কা আছে। এ কারণে বেসরকারি খাত নির্বাচনের আগেই নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজটি সেরে নিচ্ছেন।

সরকারি খাতের কাজের বড় একটি অংশ নির্বাচনের আগেই হয়ে গেছে। এখন সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। নির্বাচনের কারণে অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়ছে তা মূল্যায়ন করেছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-

অর্থনীতিতে বেশি প্রভাব পড়বে না

-ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের কারণে অর্থনীতিতে মিশ্র প্রভাব পড়বে। তবে

এবার নির্বাচনকালীন সময় খুব কম। এ কারণে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলাপ-আলোচনা খুব সীমিত সময়ের মধ্যেই থাকছে। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্থবিরতার বিষয়টি খুব সীমিত সময়ের জন্য থাকছে। ফলে খুব বেশি প্রভাব থাকার কথা নয়। তবে নির্বাচনের কারণে রাজস্ব আহরণ, প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে কিছুটা স্থবিরতা আসবে। এটি আবার নির্বাচনের পরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির একটি বড় দিক হচ্ছে এ সময় আটকে থাকা টাকার সঞ্চালন বেড়ে যায়। যদিও তা উৎপাদন খাতে যায় না। তবু টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে অর্থনীতিতে এক ধরনের ভারসাম্য তৈরি হয়। অর্থনীতিতে ভারসাম্য এই প্রক্রিয়ায় আসাটা ঠিক নয়। ভারসাম্য আসা উচিত পলিসির মাধ্যমে। কিন্তু সেভাবে আসে না। বরং বৈষম্য বাড়ে।

সঞ্চিত টাকা বাজারে আসে

-ড. জায়েদ বখত

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, নির্বাচনের কারণে অর্থনীতিতে

কিছুটা প্রভাব পড়ে। নির্বাচনী বছরে খরচ বেড়ে যায়। যারা নির্বাচন করেন তারা যেমন খরচ করেন, আবার প্রার্থীদের পক্ষের লোকজনও খরচ করেন। এই সময়ে সঞ্চিত টাকার একটি অংশ বাজারে আসে। এসব টাকার বড় অংশই যায় গ্রামের মানুষের হাতে।

এতে অর্থনীতিতে ভারসাম্য আসে। আবার নির্বাচনের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া স্থগিত থাকে। তবে উৎপাদনের কাজগুলো চলতে থাকে। ফলে উৎপাদনের দিকে কোনো সমস্যা না হলেও চাহিদা বেড়ে যায়। এর প্রভাবে উৎপাদন বাড়ে। এটি ইতিবাচক দিক।

তবে এই সময়ে টাকার একটি বড় অংশই যায় অনুৎপাদনশীল খাতে, যা অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দেয়। তবে এটা হয় সাময়িক সময়ের জন্য। নির্বাচনের পরে আবার স্বাভাবিক গতির চেয়ে বেশি গতি পায় অর্থনীতি। ফলে আবার ভারসাম্য চলে আসে।

অর্থনীতি চাঙ্গা হবে

-শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন

নির্বাচন দেশের অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করবে না, বরং ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হবে বলে মনে করেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম

মহিউদ্দিন। তার মতে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও গণমাধ্যমের প্রসারের কারণে এখন দেশের মানুষ অনেক সচেতন। মানুষ ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পছন্দ করে না। এ বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলো অনুধাবন করতে পেরে সংলাপে বসেছে। এটি ইতিবাচক দিক। মহিউদ্দিন বলেন, রাজনীতি-নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত নই। ২০১৪ সালের মতো জ্বালাও-পোড়াও হবে বলে মনে হয় না। রাজনীতিবিদ-জনগণসহ সবাই বুঝতে পেরেছেন, সবার আগে দেশ ও দেশের অর্থনীতি। এক মাস আগেও সংলাপ নিয়ে শঙ্কা ছিল, কিন্তু তা কেটে যাওয়ায় আগামী নির্বাচন উৎসবমুখর হবে বলে মনে করি। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে, প্রধান দুই দলের মনোনয়ন ঘিরে। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে প্রধান দুই দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী দলবল নিয়ে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনের কারণে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।

উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে না

-সিদ্দিকুর রহমান

আগে নির্বাচন এলেই ভাংচুর শুরু হতো। এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। তাই নির্বাচনকালীন সময়ে পোশাক শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে না বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, এ বছর স্বচ্ছ নির্বাচনের দিকে দেশ আগাচ্ছে বলে মনে হয়। এতে ব্যবসায়ীরা আশাবাদী যে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বাংলাদেশের মানুষও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পছন্দ করে না।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে পোশাক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। কোনো শিল্প মালিক উৎপাদনও কমিয়ে দেয়নি। অন্য সময়ের মতো উৎপাদন অব্যাহত আছে। যার প্রমাণ হচ্ছে, জুলাই-অক্টোবরে রফতানি প্রবৃদ্ধি। আগে এ সময়ে রফতানি কম হতো।

এবার চার মাসে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে শুধু অক্টোবর মাসেই ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা পোশাক শিল্পের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তার মানে, যারা বলছে মালিকরা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে সেটা সঠিক নয়।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *