স্পোর্টস ডেস্ক:: বাংলাদেশের ক্রিকেট-সংস্কৃতিতে শুধু একটি ফরম্যাটে মনোযোগী হওয়া দুষ্কর। মুমিনুল হক ও তাইজুল ইসলাম সেই কাজটাই করে আসছেন। মুমিনুল অবশ্য শুরু থেকেই নিজেকে টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এক মৌসুমে হয়তো বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৮-১০টা টেস্ট ম্যাচ খেলে। এই ফরম্যাটে মুমিনুলের মতো তাইজুল খুব বেশি আলোচনায় থাকেন না। আড়ালে থেকে দলের জন্য আসল কাজটা করেন।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেটার মনে করেন শুধু এক ফরম্যাটে খেলা মানে ক্যারিয়ার নিভিয়ে দেয়া। তাইজুলের চিন্তা ভিন্ন। তার স্বভাবে চঞ্চলতা নেই। বেশি কথা বলার চেয়ে নিজের কাজটা ঠিকঠাকমতো করতে পারলেই খুশি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হলেন টেস্ট সিরিজসেরা।
অথচ সিরিজ শেষে তার নাম সেভাবে উচ্চারিত হল কই। তাইজুল এসবের ধার ধারেন না। তিনি বলেন, ‘আমি যে ফরম্যাটে খেলি সেখানেই আমাকে মনোযোগী হতে হবে। খারাপ খেললে আমার গায়েই লাগবে।’
সিলেট টেস্টে পেয়েছিলেন ১১ উইকেট। ঢাকা টেস্টে সাতটি। আরেকটি উইকেট নিতে পারলেই বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেটের কীর্তি (১৯টি, মিরাজের অভিষেক সিরিজে) ছোঁয়া হতো তাইজুলের। তবে অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশে হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট তারই। এই সময়ে তাইজুল ৮৫টি, সাকিব ৭৪ এবং মিরাজ ৬৯ উইকেট পেয়েছেন।
সাকিব আল হাসান না থাকায় এই সিরিজে সবচেয়ে বেশি বল করতে হয়েছে তাইজুলকে। ঢাকা টেস্টের শেষ ইনিংসে মিরাজ পাঁচ উইকেট নিতে বল করেছেন ১৮.১ ওভার। সেখানে তাইজুল একাই করেছেন ৩৭ ওভার। প্রথম ইনিংসে তাইজুল করেছিলেন ৪০.১ ওভার।
মোস্তাফিজ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ওভার! সাকিব না থাকলে হয়তো তাইজুলই হতেন দলের সেরা টেস্ট স্পিনার। তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে ভাবি না। সাকিব ভাই এই সিরিজে না থাকায় আমার ওপর হয়তো দায়িত্ব বেশি ছিল। আমি সেই দায়িত্ব উপভোগ করেছি।’
বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশিও তাইজুলে মুগ্ধ। তিনি বলেন, ‘আমি দলের সঙ্গে আছি প্রায় দেড় বছর। তাইজুলকে দেখেছি কঠোর পরিশ্রম করতে। সে মাত্র একটি ফরম্যাটে খেলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক ওভার বল করে। তার সাফল্যে আমি খুশি।’
তিনি বলেন, ‘আমি তাকে যেভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি সেটা সে গভীরভাবে গ্রহণ করে। কোনো একটা বিষয় দেখিয়ে দিয়ে তাকে করতে বললেই সে গভীর মনোযোগে সেটা করে। খুবই আন্তরিক। তার কঠোর পরিশ্রমের কারণেই হয়তো স্রষ্টা তাকে পুরস্কার দিচ্ছে।’
বাংলাদেশ টেস্ট কম খেলে। সেখানে শুধু এই একটা ফরম্যাটে খেলে কীভাবে নিজেকে ঠিক রাখা সম্ভব? যোশি বলেন, ‘তাইজুল মানসিকতার পরিবর্তন মেনে নিয়েছে। এটা খুবই কঠিন কাজ। তাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। কারণ এই ফরম্যাটে খেলে যাওয়া সাধনার ব্যাপার।’