যেভাবে শুরু নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ

নিউজ ডেস্ক::  রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তাদের ১৬ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য আহত হয়েছেন।

এছাড়া বিএনপি দাবি করেছে এ সংঘর্ষে তাদের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রির তৃতীয় দিন বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সকাল থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড় শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি মিছিল কার্যালয়ের সামনে আসে। এ সময় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আরও কয়েকটি মিছিল দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হয়। তখন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

একপর্যায়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ফুটপাতের দিকে অবস্থান নেয়ার জন্য রাস্তা ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন এবং তাদেরকে ফুটপাতের দিকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।

তখন উপস্থিত নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং রাবার বুলেট ছুড়ে। তখন বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে উদ্দেশ করে ইটপাটকেল, জুতা এবং অন্যান্য বস্তু নিক্ষেপ করতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আশায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের ভিড়ে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। বেলা ১টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় সংঘর্ষ বেধে যায়।

কিছুক্ষণ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলতে থাকে। পুলিশ মারমুখী হলে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন দেন বিএনপি কর্মীরা।

পুলিশের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের এই সংঘর্ষের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, সরকারপ্রধানের নির্দেশেই এ হামলা হয়েছে। সরকার বিভিন্নভাবে উসকানি দেবে। আপনারা (নেতাকর্মী) তাদের ফাঁদে পা দেবেন না।

রিজভী বলেন, আমরা শান্তির পক্ষে। সরকারের নির্দেশে পুলিশ বিনা উসকানিতে এ আক্রমণ করেছে। তার পরও আমরা অশান্তির পথে হাঁটব না। সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেব।

তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপনাদের শান্ত হতে বলেছেন। আপনারা রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে বসে পড়ুন। এটি তারেক রহমানের নির্দেশ।

এদিকে বিনা উসকানিতে ইস্যু তৈরির জন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মহানগর পুলিশের ‍মতিঝিল জোনের এডিসিসহ ১৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা তা মানেনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, দুজন রাজনৈতিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় হাজার হাজার নেতাকর্মী পার্টি অফিসের সামনে আসে। এ সময় রাস্তা বন্ধ হয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে গেলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ঢিল ছুড়তে শুরু করে।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের দুটি সেডান গাড়ি ও একটি ভ্যানে বিএনপিকর্মীরা হামলা করে এবং পরে দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অনুরোধ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, আপনার সুশৃঙ্খলভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করুন, এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। পুলিশ রাষ্ট্রের কর্মচারী। পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাববেন না।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *